আজাদের বাবা নামকরা পীর ছিলেন। কিন্তু আজাদ লেখাপড়া শিখেছেন। শহরে চাকরি করেন। দীর্ঘদিন পর গ্রামে বেড়াতে আসেন। গ্রামের মুরব্বি তার কাছে এসে তাকে সালাম করতে যায়। আজাদ সাহেব নিজেই তাকে সালাম করেন, কিন্তু মুরব্বি এ ঘটনায় নিজেকে পাপী মনে করেন। আরেকজন তার কাছে পানি পড়া নিতে আসে। তাকে আজাদ সাহেব বোঝানোর চেষ্টা করেন।
ধর্মকে পুঁজি করে মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিতে দেখা যায় 'বহিপীর' নাটকের বহিপীরকে। কিন্তু উদ্দীপকের আজাদ মানুষের সেই দুর্বলতাকে ব্যবহার করেন না।
ধর্ম মানুষের কাছে অত্যন্ত পবিত্র বিষয় হিসেবে বিবেচিত। কারণ ধর্মের মাধ্যমে মানুষ আত্মিক শান্তি লাভ করে। ফলে যারা ধর্মসংশ্লিষ্ট মানুষ তাদের প্রতিও একধরনের দৃঢ়বিশ্বাস থাকে। তবে কিছু কিছু অসাধু মানুষ আছে, যারা এটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে স্বার্থ হাসিল করে। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে। এরা ঘৃণ্য মানুষ এবং ধর্মব্যবসায়ী। কারণ ধর্মব্যবসায় করেই এরা স্বার্থ উদ্ধার করে।
উদ্দীপকে আজাদের বাবা নামকরা পীর ছিলেন। কিন্তু আজাদ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। শহরে চাকরি করেন। অনেকদিন পর গ্রামে গিয়ে দেখলেন যে, মানুষ তাকে অত্যন্ত ভক্তি করছে। গ্রামের মুরব্বিরাও তাকে সালাম করতে আসেন। মানুষ পানিপড়া নিতে আসছে। আজাদ তাদের এ ভক্তি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। তাই তিনি মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন যে, তার বাবা পীর হলেও তিনি কিন্তু পীর নন। 'বহিপীর' নাটকেও দেখা যায়, বহিপীরের প্রতি মানুষ অনেক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। ফলে সারা বছরই তাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। তিনি মুখ ফুটে বললেই মানুষ অনেক টাকা বের করে দিতে প্রস্তুত। এমনকি ভক্তির কারণে বৃদ্ধ পীরের কাছে কিশোরী মেয়েকে বিয়ে দিতেও আপত্তি করে না।
'বহিপীর' নাটকে বহিপীরকে অত্যন্ত সুযোগসন্ধানী চরিত্রের মানুষ হিসেবে পাওয়া যায়, যার বৈষয়িক জ্ঞান অত্যন্ত জোরালো। কারণ যদি সত্যিই তিনি ধর্মের অনুগামী হতেন, তবে কিশোরী মেয়েকে বৃদ্ধ বয়সে বিয়ে করার চিন্তা করতেন না। আর তিনি যদি পীর না হতেন তাহলে তাহেরাকেও তার কাছে বিয়ে দেওয়া হতো না। পীর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েই তাহেরাকে বিয়ে করেছেন, যা তার ধর্ম ব্যবসায়কে নিশ্চিত করে। উদ্দীপকের আজাদের প্রতিও মানুষের অন্ধভক্তি আছে। ইচ্ছা করলেই আজাদ এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক কিছু করতে পারতেন। কিন্তু তিনি ধর্মব্যবসায়ী নন, তাই তিনি মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন।
সারকথা: বহিপীর' নাটকে দেখা যায় বহিপীর ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেন। একই সুযোগ থাকা সত্ত্বেও করেন না। কারণ উদ্দীপকের আজাদ বহিপীরের মতো ধর্মব্যবসায়ী নন।