কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের শুভেচ্ছাদূত ঘানিম আল মিফতাহ এক বিস্ময়কর বালক। কোমরের নিচের অংশ ছাড়াই সে জন্মগ্রহণ করে। ঘানিমের মা সাহসিনী নারী। তিনি স্বামীকে বললেন তুমি হবে পুত্রের ডান পা, আমি হবো বাম পা। তাঁরা নিবিড় পরিচর্যায় প্রতিবন্ধী পুত্রকে আগলে রাখলেন। ঘানিম স্কুলের সহপাঠীদের দ্বারা নানা কটু কথার স্বীকার হলেও মায়ের অদম্য সাহস ও অনুপ্রেরণায় নিজেকে অতুলনীয় ব্যক্তিত্বে রূপান্তর করে। ঘানিম উচ্চ শিক্ষা শেষে আজ একজন সফল উদ্যোক্তা ও বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত অনুকরণীয় মানুষ।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রুমা গ্রীষ্মের ছুটিতে মামাবাড়ি বেড়াতে গেলে তার মামি বাহারি খাবার ও ফলমূল বাঁশ, বেত ও খেজুরপাতার তৈরি পাত্রে পরিবেশন করেন। পাত্রগুলো আবার সুন্দর সুন্দর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মামি বললেন, আমরা গ্রামের মানুষ, তোমাদের মতো দামি জিনিস কেনার সামর্থ্য নেই। তাই নিজেরাই অবসরে এগুলো বানিয়ে ব্যবহার করি। গ্রামের মানুষের কাছে এসবের তেমন গুরুত্ব নেই। এ সময় রুমা বলল, গ্রাম বাংলার এসব ঐতিহ্যের মাঝে অসংখ্য নিপুণ কারিগরের মনের মাধুরি মেশানো রয়েছে। আগামী মাসেই আমরা বন্ধুরা মিলে এ গ্রামে একটি কারুশিল্প মেলার আয়োজন করে এগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিব।
ঘটনা-১: প্রাচীন মিশরের মানুষ ছিল সৌন্দর্যের পূজারি। সেই সময় সেখানে এসেছিলেন হযরত ইউসুফ (আ:)। তৎকালীন মিশরের সেনাপ্রধানের স্ত্রী জুলেখা তার রূপে মুগ্ধ হয়ে স্বামীর কাছে এ বিষয়ে প্রায়ই বিশদ বর্ণনা করতেন।
ঘটনা-২: একটি ধর্মযুদ্ধে হযরত আলী (রা:) যখন একজন কাফেরকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন, সে তখন হযরত আলী (রা:) এর মুখে এক দলা থুথু নিক্ষেপ করে। এতে তিনি ক্ষুব্ধ না হয়ে তাকে মুক্ত করে দেন। এভাবে তিনি প্রায়ই অনেক শত্রুকে ক্ষমা করায় পরবর্তীতে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে মাসুদ সাহেব শ্রমিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে কাজ করেন। একদিন মাসুদ সাহেবের স্ত্রী খোরশেদা দেখে মাসুদ সাহেব শ্রমিকদের সাথে একত্রে চা-বিস্কুট খাচ্ছেন। আরেকদিন দেখে মাসুদ সাহেব শ্রমিকদের সাথে কাজ করছেন এতে খোরশেদা ক্ষিপ্ত হয়ে বলে 'তুমি পুরো কাজ চুক্তি করে দিয়েও ওদের কাজ করো কেন? তোমার সম্মানবোধ নেই। যার কাজ তাকে করতে দাও।' জবাবে মাসুদ সাহেঘ বলেন, 'ওরাও মানুষ। ওদের সাথে মিশলে, কাজ করলে আমার মর্যাদা কমছে না। বরং তারা আরো আন্তরিকতার সাথে পরিচ্ছন্ন ও নির্ভুলভাবে কাজ করছে।'
দেশের প্রলয়ংকারী বন্যায় মাদ্রাসা শিক্ষক কাজল তার মাদ্রাসার ছেলেমেয়েদের নিয়ে বানভাসী মানুষের জন্য ব্যাপক ত্রাণকার্যক্রম পরিচালনা করে। কাজল আরো অর্থ সংগ্রহের জন্য তার ব্যবসায়ী বন্ধু রানার নিকট ই-মেইল পাঠিয়ে টাকা প্রেরণের অনুরোধ জানায়। কাজলের ধারণা ছিল রানা দেশের বড় ব্যবসায়ী-নিশ্চয় সে বড় অংকের টাকা পাঠাবে। রানার ফিরতি ই-মেইল পড়ে কাজল মনঃক্ষুণ্ণ হয়। সে লিখেছে, 'কষ্টার্জিত টাকা থেকে দান করা সম্ভব নয়। জীবনে উন্নতি করতে হলে নীচের দিকে তাকালে চলে না। তুইও ওসব ছাড়, ওদের থেকে দূরে থাক'। কাজল আহত হয়ে রানার সাথে বন্ধুত্বের সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে যুক্ত করে।
মহিউদ্দীন সাহেবের পিয়ন কলিমুদ্দীন। সে ম্যানেজারকে বলল, "স্যার এ শহরে কি মানুষ থাকে। একদিকে লবণাক্ত পানি, অন্যদিকে প্রায়ই ঝড়-তুফান, বন্যা, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। বায়ু দূষণের ফলে নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না। আর খাবারের কথাতো বলাই বাহুল্য। অথচ আমাদের গ্রামের কথা ভাবুন। চারদিকে শান্ত-স্নিগ্ধ নির্মল পরিবেশ, সুপেয় পানি, নানা রকমের ফরমালিনমুক্ত তাজা ফল, শাক-সবজি, গরুর খাটি দুধ কী নেই? যখন যে পিঠা খেতে ইচ্ছে করবে শুধু বলুন, মুহূর্তের মধ্যে তৈরি পাবেন।
রহিম ও কামাল দুই বন্ধু। গল্পের এক পর্যায়ে রহিম বললো, “দেখ বন্ধু আগের দিনগুলো কী সুন্দর ছিলো! সংসারের মোহে পড়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেই যাচ্ছি। কিন্তু কী পেলাম! ভেবেছিলাম ছেলেমেয়ে বড় হলে আরাম পাবো। এখন সবাই যার যার, তার তার।” বন্ধু কামাল বললো, "অত ভেবনা, যত ভাববে ততো বেশি কষ্ট পাবে। বরং তোমার যা করার তুমি তা করে যাও। অন্যের কল্যাণ চিন্তা করো। তুমি চিরকাল থাকবে না, তোমার কর্ম থাকবে। এমন কিছু করো যাতে তুমি চলে গেলেও মানুষ তোমাকে মনে রাখে।"
মশার কামড়ে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে চেয়ারম্যান সাহেব তার খাস লোকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। চেয়ারম্যানের ডান হাত হিসেবে পরিচিত আকিব সাহেব বললেন, এটি কোনো ব্যাপারই না। সন্ধ্যাবেলা ব্যাপকহারে ধূয়া দিলেই সব মশা মরে যাবে। তার পরামর্শে সমস্ত এলাকা ধূয়ায় অন্ধকার করা হলো। কিন্তু কোনো সুফল পাওয়া গেল না। এমনি আরো কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়ে ব্যর্থ হয়ে আকিব সাহেব বললেন, পৃথিবীর ভারসাম্যের জন্য মশারও দরকার আছে। রক্ত না খেলে তারা বাঁচবে কী করে। এ সময় মহিলা দর্জি তাবাসসুম বলল, আমি একটা জিনিস তৈরি করে দিচ্ছি, যার ভিতরে থাকলে মশা কামড়াতে পারবে না। সবার অনুরোধে তিনি মশারি তৈরি করে দিলেন।
রাস্তার মোড়ে পাশাপাশি দুইজন ভিখারী সকাল থেকেই সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকে। প্রতিদিন অফিসের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় মনির উদ্দীন পালাক্রমে দু'জনকেই সাহায্য করে। এ ঘটনা পাশের দোকানদার মিন্টু প্রতিদিন দেখে। একদিন মিন্টু মনির উদ্দীনকে বলেন, "আপনি নিয়মিত দু'জন ভিখারীকে সাহায্য করেন। আপনি কি জানেন তারা প্রকৃত অভাবী নয়। তাছাড়া একজন ভিন্ন ধর্মের।" জবাবে মনীর উদ্দীন বলেন, "আমি কোনো ধর্ম, বর্ণ হিসেবে দেখি না, আল্লার সুষ্টি মানুষ হিসেবে দেখি। আল্লাহ সকলের সম্পদের সাথে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল গরীবের হক রেখেছেন। আমি সেটা দেওয়ার চেষ্টা করি।
৯ম শ্রেণির এক ছাত্র রহমানকে চিনতে না পেরে ঢুকতে দেয় না মাদ্রাসার নতুন গেটম্যান। রহমান বলে, "আমাকে প্রিন্সিপাল স্যার চেনেন। চেনে শিক্ষার্থীরাও। এই মাদ্রাসায় আমি ক্লাস ওয়ান থেকে পড়ে আসছি। এই মাঠে কত খেলেছি। এই মাঠের ঘাস আমাকে চেনে। পিয়ন আযাবুলকে ডাক, সেও অস্বীকার করবে না। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ধূলিকণার সাথে আমার সম্পর্ক আছে। এই মাদ্রাসা আমার প্রাণ।"
এলাকার কিছু বখাটে ছেলে প্রায়ই জোর করে চাঁদা আদায় করে রহিমুদ্দীর বাড়ি গিয়ে। তারা কখনো ভাংচুর করে, কখনো মুত্যুর হুমকিও দেয়। সহজ সরল রহিমুদ্দী আর সহ্য করতে পারে না। সে কুড়াল হাতে নিয়ে হুংকার দেয়, "কিছু বলি না বলে দুর্বল মনে করেছিস। একাত্তরে রক্ত দিয়েছি, আর এবার, হয় মারবো, নয় মরবো।” কুড়ালের আঘাতে একজনের মাথা ফেটে যায়, বাকিরা পালিয়ে বাঁচে।