তোমরা আগেই জেনেছ যে উদ্ভিদ অভিস্রবণ পদ্ধতিতে পানি গ্রহণ করে। এ পানি জাইলেম ভেসেলের মাধ্যমে সুউচ্চ বৃক্ষের সর্বোচ্চ স্থানের পাতায়ও পৌঁছে যায়। পাতা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় এ পানি ব্যবহার করে। আলোর উপস্থিতিতে ক্লোরোপ্লাস্টে বায়ু থেকে গৃহীত CO, এবং মাটি থেকে গৃহীত পানির সংমিশ্রণে শর্করাজাতীয় খাদ্য উৎপন্ন হয়। এ উৎপন্ন খাদ্য উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে চলে যায়। উদ্ভিদের প্রতিটি কোষই এ খাদ্য ব্যবহার করে শ্বসন প্রক্রিয়ায় তার বিপাকীয় কাজ চালানোর প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়। এ কাজের পর যতটুকু খাদ্য অবশিষ্ট থাকে, সেগুলো উদ্ভিদের বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে সঞ্চিত থাকে। বিভিন্ন ফল এবং বীজ ছাড়াও কাণ্ড (যেমন- গোল আলু), মূল (যেমন-মিষ্টি আলু) কিংবা পাতাতেও (যেমন-ঘৃতকুমারী) এই খাদ্য জমা থাকে। আমরা এবার দেখব সালোকসংশ্লেষণে উৎপন্ন খাদ্য কীভাবে উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়।
ফ্লোয়েমের মাধ্যমে পরিবহন (Phloem translocation)
উদ্ভিদের মূল এবং পাতা পরস্পর থেকে দূরে অবস্থান করায় খাদ্য চলাচলে একটি দ্রুত ও কার্যকর পরিবহনব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। এ কাজটি ফ্লোয়েমের সিভনল করে থাকে। ফ্লোয়েম পরিবহন কলাগুচ্ছের অন্যতম গুচ্ছ। আমরা জেনেছি যে পরিবহন কলাগুচ্ছে জাইলেমগুচ্ছ এবং ফ্লোয়েমগুচ্ছ থাকে। ফ্লোয়েমগুচ্ছে সিভনল, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা ও বাস্টফাইবার থাকে। সিভনল এক ধরনের কেন্দ্রিকাবিহীন ও পাতলা প্রাচীরযুক্ত সজীব কোষ। লম্বালম্বিভাবে এরা একটির সাথে অন্যটি যুক্ত হয়ে উদ্ভিদদেহে জালের মতো গঠন সৃষ্টি করে। দুটো কোষের মধ্যবর্তী অনুপ্রস্থ প্রাচীরটি স্থানে স্থানে বিলুপ্ত হয়ে চালুনির মতো আকার ধারণ করে। এর ফলে খাদ্যদ্রব্য সহজেই এক কোষ থেকে অন্য কোষে চলাচল করতে পারে। শীতকালে এ রন্দ্রগুলোতে ক্যালোজ নামক রাসায়নিক পদার্থ জমা হয়ে রন্ধ্র ছোট হয়, তাই খাদ্য চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। গ্রীষ্মের আগমনে ক্যালোজ গলে যায়, তাই খাদ্য চলাচল বেড়ে যায়।
common.read_more