সমন্বয় কার্যক্রমে তামাক ও মাদকদ্রব্যের প্রভাব (10.7)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) সমন্বয় | - | NCTB BOOK
169
169

আমাদের দেশে সাধারণত তামাক, গাঁজা, ভাং, চরস, আফিম, মরফিন, কোকেন, মদ ইত্যাদি মাদকদ্রব্য হিসেবে পরিচিত। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোকেন ও আফিম থেকে কৃত্রিম উপায়ে ঔষধ তৈরি করা হচ্ছে। এগুলোও নেশার উদ্রেক করে। যেমন: ঘুমের ঔষধ।
মানুষ কেন মাদকাসক্ত হয় তার বহুবিধ কারণ রয়েছে। তার মাঝে মাদকদ্রব্যের প্রতি কৌতূহল, বন্ধুবান্ধব এবং সঙ্গীদের প্রভাব, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের আগ্রহ, সহজ আনন্দ লাভের চেষ্টা, পরিবারে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা, পারিবারিক কলহ এবং অশান্তি, বেকারত্ব, হতাশা, অভাব অনটন, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা উল্লেখযোগ্য। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে মাদকাসক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হলো স্বাভাবিক সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্কের ঘাটতি।
তামাক ব্যবহারে, জর্দা চিবিয়ে খেলে কিংবা ধূমপান করলে রক্তে নিকোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। নিকোটিন প্রাথমিকভাবে স্নায়ু কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে, পরবর্তীতে দেহে নিকোটিনের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। নিকোটিনের এই চাহিদা মেটাতে জর্দা ব্যবহার বা ধূমপানের নেশায় মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ে। নিকোটিন গ্রহণে ধীরে ধীরে স্নায়ুকোষের কার্যকারিতা নষ্ট হতে থাকে। হাত, পা কিংবা মাথা অনৈচ্ছিকভাবে কাঁপতে থাকে। ফলে কোনো সূক্ষ্ম কাজ, যেমন সুইয়ের ছিদ্রে সুতা ঢোকানো, সোজা দাগ টানা, লেখালেখিতে ব্যর্থতাজনিত সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয়।
মাদকদ্রব্য ব্যবহারে স্নায়ুতন্ত্রের উপর অনেক বড় প্রভাব পড়ে। মাদকাশক্তির কারণে একজন তার নিজস্ব ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মেনে নেশাদ্রব্য গ্রহণে বাধ্য হয়। নেশা বস্তুর কারণে তার চিন্তাশক্তি ক্রমে লোপ পায়। মাদকদ্রব্য ব্যবহারকারীরা কাজে মনোযোগ হারায়, সাধারণ জীবনযাপনে ব্যর্থ হয়। অতিরিক্ত নেশায় অচৈতন্য অবস্থায় কোনো স্থানে পড়েও থাকতে পারে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় পর পর মাদক গ্রহণ করতে না পারলে তার মারাত্মক কষ্ট হয়, এমনকি শরীরে অনিয়ন্ত্রিত খিঁচুনিও হতে পারে। এ জন্য মাদকের অর্থ জোগাড় করতে সেই ব্যক্তি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে।
মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের সাহায্যে মাদকের নেশা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব। তবে এ কাজে পরিবারের সবার সহানুভূতি ও সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।


মাদকাসক্তির কুফল
-মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে মানসিক, শারীরিক, সামাজিক ও আর্থিক ক্ষতিসাধন হয়।
-এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায়:
-পারিবারিকভাবে এবং সামাজিকভাবে স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের পরিবেশ বজায় রাখা।
-নৈতিক শিক্ষা কার্যক্রম প্রসার করা।-বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
-অসৎ বন্ধুবান্ধব থেকে দূরে থাকা ও এর কুফল সম্পর্কে অবহিত করা।
-এ ব্যাপারে জনসচেতনতা গড়ে তোলা ও আইনের সঠিক প্রয়োগ করা।
মাদকাসম্ভদের ঘৃণা বা অবহেলার চোখে না দেখে তাদেরকে সহানুভূতির সাথে ধৈর্য সহকারে সমাজে পুনর্বাসন বা প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা উচিত। প্রয়োজনে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের সহায়তা গ্রহণ করা অপরিহার্য। এ উদ্দেশ্যে 1990 সালে বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নামে একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। দিন দিন এ অধিদপ্তরের কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদের কার্যক্রমের মধ্যে মাদকদ্রব্য আইন প্রণয়ন, আইনের প্রয়োগ, নিরোধ, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন উল্লেখযোগ্য।


একক কাজ
কাজ: তামাক ও মাদকদ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পোস্টার/লিফলেট অঙ্কন কর এবং শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion