প্রাণীর সমন্বয় প্রক্রিয়া (10.2)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) সমন্বয় | - | NCTB BOOK
150
150

হরমোনাল প্রভাব
প্রাণীর প্রয়োজনীয় সমন্বয় কাজ স্নায়ু ছাড়াও হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। হরমোনের কারণে প্রাণী তার কার্যকলাপ অর্থাৎ নড়াচড়া বা আচরণের পরিবর্তন করে থাকে। এই বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় প্রচুর গবেষণা হয়েছে। নানা ধরনের নালিহীন গ্রন্থি থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়। নালিহীন গ্রন্থিগুলো একে অপরকে নিয়ন্ত্রণ করে। আবার স্নায়ুতন্ত্র নালিহীন গ্রন্থির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো কার্যক্রমে হরমোনকে যদি কারখানার শ্রমিক ধরা হয়, তাহলে সার্বিকভাবে কোন শ্রমিক কোথায়, কতক্ষণ কাজ করবে, সেটি যেরকম ব্যবস্থাপক নিয়ন্ত্রণ করেন, স্নায়ুতন্ত্রও তেমনি ব্যবস্থাপকের মতো হরমোনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। উল্টো দিকে স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ এবং কাজের উপর রয়েছে হরমোনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব।
প্রথমে ধারণা ছিল, সব হরমোনই বুঝি উত্তেজক পদার্থ। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা গেছে সব হরমোন উত্তেজক নয়, এদের মধ্যে কিছু কিছু নিস্তেজকও আছে। হরমোন অতি অল্প পরিমাণে বিশেষ বিশেষ শারীরবৃত্তীয় কাজ বা পদ্ধতি সূক্ষ্মভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এরা উত্তেজক বা নিস্তেজক হিসেবে দেহের পরিস্ফুটন, বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন টিস্যুর কার্য নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যপ্তির আচরণ, স্বভাব এবং আবেগপ্রবণতার উপরও হরমোনের প্রভাব অপরিসীম। এগুলো রপ্তের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে উৎপত্তিস্থল থেকে দেহের দূরবর্তী কোনো কোষ বা অঙ্গকে উদ্দীপিত করে। এজন্য এদেরকে কখনো কখনো রাসায়নিক দূত (Chemical messenger) হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
জীবনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধনে নানা প্রাণী হরমোন ব্যবহার করে। পিঁপড়া খাদ্যের খোঁজ পেলে খাদ্যের উৎস থেকে বাসায় আসার পথে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত করে, যাকে ফেরোমন বলে। এর উপর নির্ভর করে অন্য পিঁপড়াগুলোও খাদ্য উৎসে যায় এবং খাদ্য সংগ্রহ করে বাসায় ফিরে আসে। এ কারণে পিঁপড়াদের এক সারিতে চলাচল করতে দেখা যায়। খাদ্য শেষ হলে পিঁপড়া ফেরোমন নিস্বরণ বন্ধ করে দেয়, যা সহজেই বাতাসে উবে যায়, তখন অন্য পিঁপড়া আর খাদ্য সংগ্রহে যায় না। কোনো কোনো পতঙ্গ ফেরোমন দিয়ে তার স্বপ্রজাতির সঙ্গীকে খুঁজে পেতে পারে। দেখা গেছে কোনো কোনো পতঙ্গ বাতাসে ফেরোমন নিঃসৃত করলে 2-4 কিলোমিটার দূর থেকে তার সঙ্গীরা আকৃষ্ট হয়। তোমরা হয়তো ফেরোমন ব্যবহার করে পোকা ধ্বংসের ফাঁদ তৈরি করার কথা শুনেছ। এ পদ্ধতিতে ফেরোমনের কারণে আকৃষ্ট হয়ে অনিষ্টকারী পোকা ফাঁদে এসে পানিতে ডুবে মারা যায়। অনিষ্টকারী পোকা দমনে এ পদ্ধতিটিই খুবই পরিবেশবান্ধব।


স্নায়বিক প্রভাব
হাঁটাচলা, উঠাবসা, কথা বলা, চিন্তা করা, লেখা-পড়া করা, হাসিকান্না ইত্যাদি কাজ করার জন্য দেহের বিভিন্ন অঙ্গ অংশ নেয়। এ অঙ্গগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে একটি সমন্বয় ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। স্নায়ুতন্ত্র এবং হরমোনতন্ত্র মিলে দেহের এই কাজ পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয় করে। যে তন্ত্রের সাহায্যে প্রাণী উত্তেজনায় সাড়া দিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে, দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সংযোগ রাখে, তাদের কাজে শৃঙ্খলা আনে এবং শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, তাকেই স্নায়ুতন্ত্র বলে। আমাদের সারা শরীরের বিভিন্ন কাজের ভিতর সুসংবদ্ধতা আনার জন্য লক্ষ লক্ষ কোষের কাজের সমন্বয় সাধন (Co-ordination) করতে হয়। দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কাজের সমন্বয় সাধনের জন্য স্নায়ুতন্ত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আমাদের দেহ চলে পরিবেশের উদ্দীপনায় সাড়া জাগানোর ফলে। দেহের বাইরের জগৎ হলো বাহ্যিক পরিবেশ এবং দেহের ভিতর হলো অভ্যন্তরীণ পরিবেশ। বাহ্যিক পরিবেশের উদ্দীপক হলো আলো, গন্ধ, স্বাদ এবং স্পর্শ- এগুলো আমাদের চোখ, কান, নাক, জিহ্বা এবং ত্বকের অনুভূতিবাহী স্নায়ুপ্রান্তে উদ্দীপনা জাগায়। আবার অভ্যন্তরীণ পরিবেশের উদ্দীপক হলো চাপ, তাপ এবং বিভিন্ন রাসায়নিক বস্তু। এরা অভ্যন্তরীণ অঙ্গের কেন্দ্রমুখী প্রান্তে উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। এই দুই ধরনের উদ্দীপকই অনুভূতি কিংবা কেন্দ্রমুখী স্নায়ুতে তাড়না সৃষ্টি করে। এই তাড়না মস্তিষ্কে পৌঁছে, মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ্ঞাবাহী (বা মোটরস্নায়ু) এর মাধ্যমে পেশি কিংবা গ্রন্থিতে সাড়া জাগায় এবং কোনো কাজ করতে সাহায্য করে।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion