জীবে প্রজননের ধারণা ও গুরুত্ব (11.1)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) জীবের প্রজনন | - | NCTB BOOK
221
221

জীবের ক্ষেত্রে জন্ম হলে মৃত্যু অবধারিত। জীবের শুধু মৃত্যু হলে পৃথিবী থেকে একসময় সেসব প্রজাতির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হয়নি, কারণ একদিকে পৃথিবীতে যেমন জীবের মৃত্যু ঘটছে, অন্যদিকে তেমনি প্রজননের মাধ্যমে জীবের জন্ম হচ্ছে। প্রজনন হচ্ছে এমন একটি শারীরতত্ত্বীয় কার্যক্রম, যার মাধ্যমে জীব তার প্রতিরূপ সৃষ্টি করে ভবিষ্যৎ বংশধর রেখে যায়। যে প্রক্রিয়ায় কোনো জীব তার বংশধর সৃষ্টি করে, তাকেই প্রজনন বলে।
প্রজনন প্রধানত দুই ধরনের- যৌন এবং অযৌন। সাধারণত নিম্নশ্রেণির জীবে যৌন প্রজনন হয় না, তবে কোনো কোনো নিম্নশ্রেণির জীব যৌন উপায়েও প্রজনন ঘটায়। উচ্চশ্রেণির অধিকাংশ উদ্ভিদ এবং উচ্চশ্রেণির সকল প্রাণী যৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশধর সৃষ্টি করে। যৌন জননে দুটি বিপরীতধর্মী জননকোষ পরস্পরের সাথে মিলিত হয়। এ ক্ষেত্রে একটিকে পুং জননকোষ বা শুক্রাণু (sperm), অন্যটিকে স্ত্রী জননকোষ বা ডিম্বাণু (Egg) বলে। এই দুধরনের জননকোষ একই ফুলে বা একই দেহে সৃষ্টি হতে পারে। উন্নত উদ্ভিদে এ দুধরনের জননকোষ একই দেহে সৃষ্টি হয়। এরা সহবাসী (monoecious) উদ্ভিদ। যখন দুধরনের জননকোষ আলাদা দেহে সৃষ্টি হয় তখন সেই উদ্ভিদকে ভিন্নবাসী (diecious) উদ্ভিদ বলে।
জননকোষ সৃষ্টির পূর্ব শর্ত হলো, জনন মাতৃকোষকে অবশ্যই মিয়োসিস (Meiosis) পদ্ধতিতে বিভাজিত হতে হয়। তোমরা জান, এই বিভাজনের ফলে ক্রোমোজোমের সংখ্যা জনন মাতৃকোষের অর্ধেক হয়ে যায়। কাজেই যখন পুং ও স্ত্রী জননকোষ দুটি মিলিত হয়ে যে জাইগোট সৃষ্টি করে, তাতে ক্রোমোজোমের সংখ্যা আবার জনন মাতৃকোষের সমান হয়ে যায়। পরে এই জাইগোটটি মাইটোটিক কোষ বিভাজনের (Mitotic cell division) মাধ্যমে বারবার বিভাজিত হয়ে একটি নতুন জীবদেহ সৃষ্টি করে। এভাবে একটি জীব বহু জীবের জন্ম দিয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় জীব তার ভবিষ্যৎ বংশধর সৃষ্টি করে বংশধারা রক্ষা করে।
প্রজনন না হলে জীবের অস্তিত্ব বিলোপ হয়ে যেত। ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে মানুষ পর্যন্ত সকল জীব এভাবে বংশধর সৃষ্টি করে প্রজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। তবে কী উপায়ে প্রজনন ঘটবে তা জীবের বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। এ জন্যই নিম্নশ্রেণির জীব কোষ বিভাজনের মাধ্যমে জনন ঘটায় আবার উচ্চশ্রেণির জীবে জটিল প্রক্রিয়ায় যৌন জনন সংঘটিত হয়।
যৌন জনন, অযৌন জননের তুলনায় জটিল, শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া হওয়া সত্ত্বেও যৌন জনন বিবর্তনের ধারায় জীবজগতে নিজের স্থান করে নিয়েছে। কারণ এতে মিয়োসিস বিভাজনের ফলে খুব সহজে কোনো প্রজাতির এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে অচিন্তনীয় পরিমাণ জিনগত বৈচিত্র্য সৃষ্টি হতে পারে। আমরা তৃতীয় অধ্যায়ে দেখেছি এবং দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ অধ্যায়েও দেখতে পাব যে এই বৈচিত্র্য কোনো প্রজাতিকে প্রতিকূল পরিবেশে টিকিয়ে রাখার জন্য অত্যন্ত সহায়ক। অপরদিকে অযৌন জননে অপত্য জীবগুলো মাতৃজীবের (প্রায়) হুবহু অনুরূপ হয়, সে কারণে বৈচিত্র্য খুব কম থাকে। তুলনামূলকভাবে সরলতর জীবগুলো (যেমন: ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি) অযৌন জননের মাধ্যমে খুব কম সময়ে কম শক্তি ব্যয়ে অধিকসংখ্যক জীব জন্ম দিতে পারে বলে সেইসব জীবে প্রজননের এই প্রক্রিয়াটি এখনও টিকে আছে।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion