একবার 'মূর্খ' তোতা পাখির শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন রাজা। রাজার ভাগিনাদের ওপর দেওয়া হলো সেই শিক্ষার ভার। ডাকা হলো রাজপণ্ডিতদের। নানা আলোচনা শেষে তারা সিদ্ধান্ত জানালেন, সামান্য খড়কুটো দিয়ে পাখিটি যে-বাসা বাঁধে, সে-বাসা অধিক বিদ্যাধারণের উপযুক্ত নয়। তাই রাজপণ্ডিতদের পরামর্শ অনুযায়ী পাখির জন্য নির্মিত হলো সোনার খাঁচা। অপূর্ব সে খাঁচা দেখার জন্য দেশ-বিদেশের লোক ঝুঁকে পড়ল। এরপর পণ্ডিত মশাই এলেন পাখিকে বিদ্যা শেখাতে। পুথি-লেখকরা পুথির নকল করে করে বিশাল স্তূপ তৈরি করল। বিদ্যাশিক্ষার পাশাপাশি চলল খাঁচাটার মেরামত ও মেরামতের তদারকি। পাখির শিক্ষা-কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখতে চাইলেন রাজা। পাত্র-মিত্র-অমাত্য নিয়ে রাজা শিক্ষাশালায় উপস্থিত হলেন। অমনি বেজে উঠল নানা বাদ্যযন্ত্র। রাজার শিক্ষাশালায় আসার মূল উদ্দেশ্যই ঢাকা পড়ে গেল রাজাকে স্বাগত জানাবার এমন হুলুস্থুল আয়োজনে। এদিকে, শিক্ষার চাপে পাখিটি ধীরে ধীরে আধমরা হয়ে এল। একদিন দেখা গেল, সে তার রোগা ঠোঁট দিয়ে খাঁচার শিক কাটবার চেষ্টা করছে। পাখির এ 'বেয়াদবি' দেখে ক্ষিপ্ত কোতোয়াল ডেকে আনল কামারকে। এবার পাখির জন্য তৈরি হলো শিকল, কাটা পড়ল ডানা। পণ্ডিতেরাও এক হাতে কলম, এক হাতে সড়কি নিয়ে শিক্ষা দিতে উদ্যত হলো। অবশেষে পাখিটা মারা গেল।
শিক্ষার স্বাভাবিক পথকে রুদ্ধ করে বাড়াবাড়ি রকমের আয়োজন ও জবরদস্তিটাই তোতা-কাহিনিতে করুণরূপে ফুটে উঠেছে। এ গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অপশিক্ষার প্রতিফলকে পাখির মৃত্যুর রূপকে তুলে ধরেছেন।
common.read_more