বাক্য ভাষার বৃহত্তম একক। আমরা কথা বলার সময় কিংবা লেখার সময় অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো বাক্য বা বাক্যাংশকে সংক্ষিপ্ত করে থাকি। একাধিক পদ, এমনকি একটি পূর্ণ বাক্যকেও অনেক সময় একটি শব্দে প্রকাশ করা যায়। একাধিক পদকে সংক্ষিপ্ত করে একটি পদে প্রকাশ করার রীতিকে এক কথায় প্রকাশ বা বাক্য সংকোচন বলে। বস্তুত, বহুপদকে একপদে পরিণত করার মধ্য দিয়ে বাক্য বা বাক্যাংশের সংকোচন কাজ সম্পন্ন হয়।
ভাষাবিদ মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মতে, 'একাধিক পদ বা উপবাক্যকে একটি শব্দে প্রকাশ করা হলে, তাকে বাক্য সংক্ষেপণ বলে। এটি বাক্য সংকোচন বা এক কথায় প্রকাশেরই নামান্তর।'
সংজ্ঞার্থ: অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বাক্য বা বাক্যাংশকে সংকুচিত করে প্রকাশ করাকে বা একপদে পরিণত করাকে বাক্য সংকোচন বলে।
বাক্য সংকোচনের ফলে বাক্য সংক্ষিপ্ত ও শ্রুতিমধুর হয়। সংক্ষেপে ও সংহতভাবে ভাব প্রকাশ করা হলে রচনার গুণ বা মান বৃদ্ধি পায়। নিচের অংশটুকু লক্ষ করি:
বসন্তকালের দিনের শেষ ভাগ। সামনে জনবিরল বিশাল প্রান্তর। দমন করা যায় না এমন উৎসাহ সবার মনে। কিছুক্ষণ চলতেই আমরা চার রাস্তার মিলনস্থলের দেখা পেলাম। একতারযুক্ত বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে একজন বাউল আসছেন।
উপরের বর্ণনায় যেসব শব্দ মোটা করে দেওয়া আছে, সেগুলোকে সংক্ষেপে প্রকাশ করে দেখি কেমন হয়:
বসন্তকালের অপরাহ্ণ। সামনে তেপান্তর। অদম্য উৎসাহ সবার মনে। কিছুক্ষণ চলতেই আমরা চৌরাস্তার দেখা পেলাম। একতারা বাজিয়ে একজন বাউল আসছেন।
বাক্য সংকোচনের নিয়ম
বাক্য বা বাক্যাংশ একাধিক পদের সমষ্টি। একাধিক পদকে একপদে পরিণত করাই বাক্য সংকোচন। নিচের রীতিগুলো অবলম্বন করে বাক্য সংকোচন করা হয়:
১. প্রত্যয়যোগে বাক্য সংকোচন: ডুবে যাচ্ছে যা ডুবন্ত (√ডুব্ + অন্ত)। এখানে ('√ডুব') ক্রিয়া-প্রকৃতির সঙ্গে 'অন্ত' প্রত্যয়যোগে 'ডুবন্ত' শব্দটি তৈরি হয়েছে।
২. সমাসযোগে বাক্য সংকোচন: পা থেকে মাথা পর্যন্ত আপাদমস্তক (অব্যয়ীভাব সমাস)। শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী (দ্বিগু সমাস)।
৩. আভিধানিক শব্দের সাহায্যে বাক্য সংকোচন: ময়ূরের ডাক = কেকা। হরিণের চামড়া = অজিন।অলংকারের ঝংকার = শিঞ্জন।
বাক্য সংকোচনের কতিপয় উদাহরণ:
অক্ষির সমক্ষে বর্তমান- প্রত্যক্ষ
অকালে পক্ক হয়েছে যা - অকালপক্ক
আয় বুঝে ব্যয় করে যে - মিতব্যয়ী
ইতিহাস রচনা করেন যিনি - ঐতিহাসিক
ঈষৎ আমিষ গন্ধ যার - আঁষটে
উপকারীর উপকার যে স্বীকার করে - কৃতজ্ঞ
উপকারীর উপকার যে স্বীকার করে না - অকৃতজ্ঞ
কোনো ক্রমেই যা নিবারণ করা যায় না - অনিবার্য
চক্ষুর সম্মুখে সংঘটিত - চাক্ষুষ
জীবিত থেকেও যে মৃত - জীবস্মৃত
নষ্ট হওয়াই স্বভাব যার- নশ্বর
পা থেকে মাথা পর্যন্ত - আপাদমস্তক
মৃতের মতো অবস্থা যার - মুমূর্ষু
যা পূর্বে ছিল এখন নেই- ভূতপূর্ব
যা দীপ্তি পাচ্ছে এমন - দেদীপ্যমান
যা জলে ও স্থলে চরে - উভচর
যা অতি দীর্ঘ নয়- নাতিদীর্ঘ
যার প্রকৃত বর্ণ ধরা যায় না- বর্ণচোরা
যা কোথাও উঁচু কোথাও নিচু - বন্ধুর
যা ক্রমশ বর্ধিত হচ্ছে- বর্ধিষ্ণু
যে গাছে ফল ধরে, কিন্তু ফুল ধরে না- বনস্পতি
যে রোগ নির্ণয় করতে হাতড়ে মরে - হাতুড়ে
যে গাছ অন্য গাছকে আশ্রয় করে বাঁচে - পরগাছা
যে ভবিষ্যৎ না ভেবেই কাজ করে রে - অবিমৃশ্যকারী
যে বন হিংস্র জন্তুতে পরিপূর্ণ - শ্বাপদসংকুল
যিনি বক্তৃতা দানে পটু - বাগ্মী
সম্মুখে অগ্রসর হয়ে অভ্যর্থনা- প্রত্যুদ্গমন
হনন করার ইচ্ছা- জিঘাংসা
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: (নমুনা)
১। 'কোথাও উচু কোথাও নিচু' এক কথায় প্রকাশ করলে কী হয়?
ক. বন্ধুর
খ. উচু-নিচু
গ. অসমতল
ঘ. অমসৃণ
২। যিনি বক্তৃতা দানে পটু তাকে এক কথায় কী বলে?
ক. বক্তা
খ. বাচাল
গ. বাগ্মী
ঘ. মিতভাষী
১। বাম পাশের বাক্যগুলোর সঙ্কুচিত রূপ ডান পাশের ঘরে বসাও।
প্রদত্ত বাক্য | সঙ্কুচিত রূপ |
১. অগ্রে জন্মেছে যে | |
২. জয় করার ইচ্ছা | |
৩. উপকার করার ইচ্ছা | |
৪. জয়সূচক উৎসব | |
৫. মধু পান করে যে | |
৬. যিনি ব্যাকরণে পণ্ডিত | |
৭. শুভক্ষণে জন্ম যার | |
৮. যার মরণাপন্ন অবস্থা | |
৯. প্রিয় কথা বলে যে (নারী) | |
১০. হাতির ডাক |
common.read_more