শ্বসনতন্ত্রের সাধারণ রোগ (পাঠ ৭)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান শ্বসন | - | NCTB BOOK
84
84

হাকিম সাহেব যক্ষ্মায় ভুগছেন। প্রফুল্ল বাবুর অ্যাজমা বা হাঁপানি। ছোট্ট শিশু বিকাশের নিউমোনিয়া হয়েছে। এ রোগগুলোর কারণ কী? কী ধরনের সাবধানতা গ্রহণ করলে তাদের এ রোগগুলো হতো না? এ রোগগুলোর প্রতিকার কী? এ রোগগুলোর কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা জেনে নিলে রোগের আক্রমণ থেকে অনেকাংশে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

যক্ষ্মা
যক্ষ্মা একটি অতি পরিচিত সংক্রামক রোগ। এ রোগ সহজে সংক্রমিত হয়। যারা অধিক পরিশ্রম করে, দুর্বল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করে এবং অপুষ্টিতে ভোগে বা যক্ষ্মা রোগীর সাথে বাস করে তারা এ রোগের শিকার হয়ে থাকে।

কারণ: এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এই রোগ হয়।

লক্ষণ:

  • দেহের ওজন কমতে থাকে ও শরীর দুর্বল হতে থাকে।
  • খুসখুসে কাশি হয়, কখনো কখনো কাশির সাথে রক্ত পড়তে পারে।
  • বিকালের দিকে অল্প জ্বর হয়, রাত্রে শরীরে ঘাম হয়।
  • বুক বা পিঠে ব্যথা হয়, মাঝে মাঝে পেটে অসুখ দেখা দেয়।

প্রতিকার

  • রোগীকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী, সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই চিকিৎসা বন্ধ করা যাবে না।

প্রতিরোধ

  • যক্ষ্মা প্রতিষেধক টিকা হলো বি.সি.জি.। জন্মের পর থেকে এক বছরের মধ্যে শিশুকে এই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জন্মের পরপরই যত দ্রুত সম্ভব শিশুকে এ টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।
  • যক্ষ্মা রোগীকে পৃথক রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হলো হাসপাতালে পাঠানো। এতে সুচিকিৎসা নিশ্চিত হয়।
  • রোগীর কফ-থুতু মাটিতে পুঁতে ফেলা দরকার। কারণ এসবে অসংখ্য জীবাণু থাকে।
  • হাঁচি-কাশির সময় মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে নিতে হবে।
  • যক্ষ্মা রোগীর কাছে শিশুদেরকে যেতে দেওয়া উচিত নয়।

নিউমোনিয়া
নিউমোনিয়া একটি ফুসফুসের রোগ। অত্যধিক ঠান্ডা লাগলে নিউমোনিয়া রোগ হতে পারে। হাম, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগের পরে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া রোগ হতে পারে। শিশুদের জন্য এটি একটি মারাত্মক রোগ। কারণ: এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এ রোগ হয়।

লক্ষণ: কাশি ও শ্বাস কষ্ট হয়। শ্বাস নেওয়ার সময় নাকের ছিদ্র বড়ো হয়। বেশি জ্বর হয়। কাশির সময় রোগী বুকে ব্যথা অনুভব করে।

প্রতিকার: অতিদ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর ঔষধ ও পথ্য খাওয়া দরকার। বেশি করে পানি ও তরল পদার্থ (স্যুপ, ফলের রস) পান করতে হবে। রোগীকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।

প্রতিরোধ: শিশুদের হাম বা ব্রংকাইটিস হলে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ব্রংকাইটিস
শ্বাসনালির সংক্রমণকে ব্রংকাইটিস বলে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ধুলাবালি মিশ্রিত আবহাওয়া, ঠান্ডা লাগা এবং ধূমপান থেকে এ রোগ হতে পারে।

কারণ: এক ধরনের ভাইরাস থকে এ রোগ হয়।
লক্ষণ : কাশি ও শ্বাস কষ্ট হয়। কাশির সাথে কফ থাকে। জ্বর হয়, রোগী ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে।
প্রতিকার: ধূমপান বন্ধ করা। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
হাঁপানি বা অ্যাজমা
হাঁপানি ছোঁয়াচে বা জীবাণুবাহিত রোগ নয়।
কারণ: বিশেষ কোনো খাবার, বাতাসে উপস্থিত ধুলাবালি অথবা ফুলের রেণু প্রশ্বাসের সাথে ফুসফুসে প্রবেশ করলে হাঁপানি হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণ সর্দি থেকে হাঁপানি হতে পারে।
ব্যতিক্রম: বছরের বিশেষ ঋতুতে বা ঋতু পরিবর্তনের সময় এ রোগ বেড়ে যায়।

লক্ষণ: হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্টে দম বন্ধ হওয়ার মতো হয়। রোগী জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে। ফুসফুসের বায়ুথলিতে ঠিকমত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না বা বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে রোগীর কষ্ট হয়। শ্বাস নেওয়ার সময় রোগীর পাঁজরের মাঝের চামড়া ভিতরের দিকে ঢুকে যায়। কাশির সাথে কখনো কখনো সাদা কফ বের হয়। জ্বর থাকে না। রোগী কোনো শক্ত খাবার খেতে পারে না। কখনো কখনো বমি হয়। রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে।

প্রতিকার: আলো-বাতাসপূর্ণ গৃহে বসবাস করা। যে সকল জিনিসের সংস্পর্শে আসলে বা খেলে হাঁপানি বাড়ে, তা থেকে বিরত থাকা। যেমন- পশমি কাপড়। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা। ধোঁয়া, ধুলাবালি ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা। ধূমপান পরিহার করা।

ঔষধ সেবনে শ্বাসকষ্টের কিছুটা লাঘব হয় বটে, কিন্তু রোগ পুরোপুরি ভালো হয় না। তাই শ্বাসকষ্ট লাঘবে রোগীর সাথে সব সময় ঔষধ রাখা অত্যন্ত জরুরি।

তোমরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে সালোকসংশ্লেষণ সম্পর্কে জেনেছ। তোমরা পূর্বজ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিম্নের কাজটি কর।

কাজ: দলগত কাজের মাধ্যমে সালোকসংশ্লেষণ ও শ্বসনের পার্থক্য লিখে একটি পোষ্টার কাগজে উপস্থাপন কর।

এ অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম
শক্তির জন্য প্রতিটি জীবের শ্বসন অপরিহার্য।

পত্ররন্দ্র ও রক্ষীকোষ: পত্ররন্ধ্রের রক্ষীকোষগুলো পত্ররন্দ্রকে খোলা বা বন্ধ রাখতে সাহায্য করে। রক্ষীকোষে ক্লোরোফিল থাকে। তাই দিনের বেলায় রক্ষীকোষে সালোকসংশ্লেষণ ঘটে এবং এর ফলেই পত্ররন্ধ্র খুলে যায়। প্রতিটি জীবে শ্বসন অপরিহার্য।

বহিঃশ্বসন: ফুসফুসের বায়ুথলি থেকে অক্সিজেন কৈশিকনালির রক্তে প্রবেশ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড রক্ত থেকে বায়ুথলিতে আসে। ফুসফুসের এই গ্যাসীয় আদান-প্রদানকে বহিঃশ্বসন বলে। প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস এই দুই প্রক্রিয়া বহিঃশ্বসনের অন্তর্গত।

অন্তঃশ্বসন: কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিতরে কতগুলো এনজাইমের নিয়ন্ত্রণাধীনে খাদ্যের সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়া ঘটে। এভাবে অন্তঃশ্বসন ক্রিয়া ঘটে।

লসিকা : এক রকম স্বচ্ছ, ঈষৎ মৃদু ক্ষারীয় পদার্থ। এটা এক ধরনের রূপান্তরিত কলারস।

common.content_added_and_updated_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion