শব্দার্থ

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি - | NCTB BOOK
138
138
common.please_contribute_to_add_content_into শব্দার্থ.
common.content

একই শব্দ বিভিন্ন অর্থে প্রয়োগ

80
80
একই শব্দ বিভিন্ন অর্থে প্রয়োগ

ভাষার রহস্যের কোনো শেষ নেই। বাংলা ভাষায় এমন অনেক শব্দ আছে, যেগুলো বাক্যে বিশিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং একই শব্দ ভিন্ন ভিন্ন বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। এ শ্রেণির শব্দগুলোকে ভিন্নার্থক শব্দ বলে। যেমন: 'কাপড়টির রং কাঁচা, 'কাঁচা আম খেতে টক'- এ ক্ষেত্রে 'কাঁচা' শব্দটি ভিন্ন দুটি বাক্যে যথাক্রমে 'অস্থায়ী' ও 'অপকু' অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ভাষার শ্রীবৃদ্ধি ও অর্থের বিস্তারে ভিন্নার্থক শব্দ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আভিধানিক অর্থের বাইরে পদের এ ধরনের বিশিষ্টার্থক প্রয়োগ অর্থের ক্ষেত্রে নানা ধরনের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে। নিচে একই শব্দের বিভিন্ন অর্থে প্রয়োগ দেখানো হলো:

অঙ্ক

১. অঙ্ক (গণিত): যুথি অঙ্কে কাঁচা।
২. অঙ্ক (নাটকের অংশবিশেষ) নাটকটি পাঁচ অঙ্কে সমাপ্ত।
৩. অঙ্ক (রেখা): অঙ্ক-পাত করে সাদা খাতাটি নষ্ট করো না।
৪. অঙ্ক (সংখ্যা): টাকার অঙ্ক কত হবে?

অর্থ

১. অর্থ (টাকাকড়ি): অর্থই অনর্থের মূল।
২. অর্থ (উদ্দেশ্য): আমার কাছে আসার অর্থ কী?
৩. অর্থ (অর্থ-উপার্জনে সহায়ক) পাট বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল।

উঠা

১. উঠা (উদিত হওয়া): 'পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত-লাল রক্ত লাল'।
২. উঠা (জাগা): ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে নাও।
৩. উঠা (আরোহণ): পর্বত শৃঙ্গে উঠা খুবই কষ্টকর।

কথা

১. কথা (অঙ্গীকার) কথা দিয়ে কখনো কথা ভঙ্গ করো না।
২. কথা (উপদেশ): জ্ঞানী-গুণীর কথা সকলেরই মেনে চলা উচিত।
৩. কথা (অনুরোধ) আমার পক্ষে তোমার কথা রাখা সম্ভব নয়।
৪. কথা (প্রসঙ্গ): কাজের কথা বললেই তুমি চুপ করে থাক।

কাজ

১. কাজ (চাকরি): দায়িত্বহীনতার জন্য তার কাজটি গেছে।
২. কাজ (সুফল): তোমার উপদেশে আমার বড়ই কাজ হয়েছে।
৩. কাজ দেওয়া (চাকরি দেওয়া): কাজ দিয়ে আপনি আমার বড় উপকার করেছেন।
৪. কাজ (কারুকার্য): পাথরের উপর কী অপূর্ব কাজ!

কাঁচা

১. কাঁচা (অপকু): আমগুলো এখনো কাঁচা
২. কাঁচা (অসিদ্ধ): আদিম মানুষেরা কাঁচা মাংস ভক্ষণ করত।
৩. কাঁচা (অপটু): চিঠিটা কাঁচা হাতের লেখা।
৪. কাঁচা (অস্থায়ী): কাপড়টির রং একেবারেই কাঁচা
৫. কাঁচা (মাটির তৈরি): কাঁচা ঘর-বাড়ি বন্যায় টেকে না।

কান

১. কান (অঙ্গবিশেষ) তার কান দুটি যেন খরগোশের কানের মতো খাড়া।
২. কান কাটা (নির্লজ্জ): লোকটি কান কাটা স্বভাবের।
৩. কান পাতা (আড়ি দেওয়া): কারো কথায় কান পাতা ঠিক নয়।

গা

১. গা (গাত্র, শরীর): গরমে সারা গায়ে ঘামাচি উঠেছে।
২. গা কাঁপা (ভয় বোধ করা): ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়ে তার গা কাঁপছে
৩. গা জ্বালা করা (ক্রোধের উদ্রেক হওয়া): মিথ্যা অভিযোগে গা জ্বালা করছে
৪. গা ঢাকা দেওয়া (পলায়ন করা): পুলিশের ভয়ে সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছে

চলা

১. চলা (অগ্রসর হওয়া): সৈন্যদল জোর কদমে এগিয়ে চলছে
২. চলা (অতিবাহিত হওয়া): সময় অলক্ষে চলে যায়।
৩. চলা (জীবন নির্বাহ করা): অল্প আয়ে চলা খুব কঠিন।

চোখ

১. চোখ রাখা (দৃষ্টি রাখা): ছেলেটির ওপর চোখ রেখো
২. চোখ ওঠা (রোগ বিশেষ) চোখ ওঠাতে সে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে।
৩. চোখ খোলা (সতর্ক হওয়া) যা দিনকাল পড়েছে চোখ খোলা রাখা ছাড়া উপায় নেই।
৪. চোখ রাঙ্গানো (রাগ দেখানো) আমাকে চোখ রাঙ্গিয়ে লাভ নেই।
৫. চোখের বালি (চক্ষুশূল): মেয়েটি সৎমার চোখের বালি

ছাড়া

১. ছাড়া (থামা): তিন দিন পর তার জ্বর ছেড়েছে
২. ছাড়া (যাত্রা করা) খুব ভোরেই সিলেটের উদ্দেশ্যে পারাবত ট্রেনটি ছাড়ে
৩. ছাড়া (নিরাশ হওয়া) ওর ব্যাপারে আমি হাল ছেড়ে দিয়েছি।
৪. ছাড়া (ডাকে দেওয়া) গতকাল চিঠিটা ছাড়া হয়েছে।

পড়া

১. পড়া (অধ্যয়ন করা): মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে অবশ্যই ভালো ফল করতে পারে।
২. পড়া (ক্ষমা অর্থে) পায়ে পড়ি এবার আমাকে মাফ করে দিন।
৩. পড়া (কমে আসা) এত দিনে তার রাগ পড়েছে।

পা

১. পা চাটা (অতি হীনভাবে তোষামোদ করা): সমাজে পা চাটা লোকের অভাব নেই।
২. পা বাড়ানো (যেতে উদ্যত হওয়া) তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়াল
৩. পায়ে ধরা (বিনীতভাবে অনুরোধ করা): আপনার পায়ে ধরছি আমার কাজটি করে দিন।
৪. পা (চরণ, পদ) বল খেলতে গিয়ে টুটুল পায়ে ব্যথা পেয়েছে।

পাকা

১. পাকা (পক্ক): 'পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ।'
২. পাকা (অভিজ্ঞ): তিনি একজন পাকা লোক।
৩. পাকা (ঝানু হওয়া): অল্প বয়সেই ছেলেটি বুদ্ধিতে পেকেছে
৪. পাকা (স্থায়ী): শাড়িটার রঙ পাকা
৫. পাকা (ইটের তৈরি): পাকা বাড়িঘর বেশি দিন টেকে।

ফল

১. ফল (উদ্ভিদজাত শস্য): জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রচুর ফল পাওয়া যায়।
২. ফল (লাভ, কোনো কাজের পরিণাম): 'কি ফল লভিনু হায়।'
৩. ফল (কার্যসিদ্ধি) অব্যাহত চেষ্টায় ফললাভ হবেই।
৪. ফল (ফলন): লিচুগাছে এবার খুব ফল ধরেছে।

বড়

১. বড় (বৃহৎ): জাহাজটি বেশ বড়
২. বড় (শ্রেষ্ঠ): নিজেকে সব কাজে বড় মনে করা ঠিক নয়।
৩. বড় (সম্ভ্রান্ত): নীপা খুব বড় বংশের মেয়ে।

মন

১. মন (মনোযোগ): মন দিয়ে লেখাপড়া করা উচিত।
২. মন বসা (ভালো লাগা) এত দিনে তার লেখাপড়ায় মন বসেছে
৩. মন কষাকষি (মনোমালিন্য): অনেক দিন যাবৎ তাদের দুই বন্ধুর মধ্যে মন কষাকষি চলছে।
৪. মনেপ্রাণে (ঐকান্তিকভাবে) মনেপ্রাণে দেশকে ভালোবাসা উচিত।

মাথা

১. মাথা (মেধা, বুদ্ধি): ছেলেটির বেশ মাথা আছে।
২. মাথা (আগা): গাছের মাথায় পাখিরা বাসা করেছে।
৩. মাথা (শ্রেষ্ঠ): বুদ্ধিজীবীরা দেশের মাথা
৪. মাথা (মস্তক, শির) অন্যায়ের কাছে কখনোই মাথা নোয়াবে না।
৫. মাথা ধরা (শিরঃপীড়া) হঠাৎ করে খুব মাথা ধরেছে

মুখ

১. মুখ (বদন, আনন) লঙ্কার রাজা রাবণের দশ মুখ
২. মুখ (প্রবেশ পথ) একসময় তারা গুহা মুখে গিয়ে পৌঁছাল।
৩. মুখ (সূচনা): কাজের মুখে বাধা দিয়ো না।
৪. মুখ ফোলানো (অভিমান): মেয়েটি কথায় কথায় মুখ ফুলায়
৫. মুখ রাখা (মান রাখা) এ ছেলে একদিন বংশের মুখ রাখবেই

হাত

১. হাত (প্রভাব) গ্রামের লোকের ওপর তার হাত আছে।
২. হাত করা (বশে আনা): মাতব্বর টাকা দিয়ে তাকে হাত করেছে
৩. হাত পাতা (ভিক্ষা করা) হাত পাতা খুবই ঘৃণার কাজ।
৪. হাতবদল (হস্তান্তর): এ জমিটি বহুবার হাতবদল হয়েছে।
৫. হাতপাকা (দক্ষ) সেলাইয়ের কাজে তিনি একজন হাতপাকা লোক।

common.content_added_by

অনুশীলনী

49
49

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: (নমুনা)

১। নিচের কোন বাক্যে কাঁচা অর্থ অপকৃ?
ক. চিঠিটা কাঁচা হাতের লেখা
খ. কাপড়টির রং একেবারেই কাঁচা
গ. আমগুলো এখনো কাঁচা
ঘ. কাঁচা ঘরবাড়ী বন্যায় টেকে না

২। নিচের কোন বাক্যে হাত শব্দটি ভিক্ষা করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
ক. হাত পাতা খুবই ঘৃণার কাজ
খ. জামাটি বহু হাতবদল হয়েছে
গ. গ্রামের লোকের ওপর তার হাত আছে
ঘ. মাঝির হাত পাকা

কর্ম-অনুশীলন

কাঁচা, কান, মাথা, হাত, উঠা-এ শব্দগুলো দ্বারা প্রত্যেকটির তিনটি করে ভিন্নার্থে প্রয়োগ দেখাও:

common.content_added_by

বিপরীতার্থক শব্দ দিয়ে বাক্য রচনা

68
68

বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে এমন কতকগুলো শব্দ আছে, অর্থ ও ভাবের দিক থেকে যেগুলোর রয়েছে বিপরীত অর্থজ্ঞাপক রূপ। যার মাধ্যমে আমরা প্রদত্ত শব্দটির সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থ বুঝে থাকি।

যেমন:
'আলো বলে, অন্ধকার তুই বড় কালো।'
'কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর?'

'উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে।'
'ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল 'নিম্নে উতলা ধরণী তল।'

উল্লিখিত বাক্যসমূহে আলো, স্বর্গ, উত্তম, ঊর্ধ্ব শব্দগুলোর বিপরীতার্থক শব্দ হলো যথাক্রমে অন্ধকার, নরক, অধম ও নিম্ন। সুতরাং একটি শব্দের বিপরীত অর্থবোধক শব্দকে বিপরীতার্থক শব্দ বলে।

বিপরীতার্থক শব্দ রচনাকে সুন্দর করে এবং ভাব প্রকাশের মাধুর্য বৃদ্ধি করে বক্তব্যকে প্রবাহমান সৌন্দর্য দান করে। মোটকথা, মনের ভাব সুষ্ঠুভাবে প্রকাশের জন্য এবং ভাষার সৌন্দর্য পরিবর্ধনের প্রয়োজনে বিপরীতার্থক শব্দের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিচে কতিপয় শব্দের বিপরীতার্থক রূপ প্রদত্ত হলো:

মূল শব্দবিপরীতার্থক শব্দমূল শব্দবিপরীতার্থক শব্দমূল শব্দবিপরীতার্থক শব্দ
অগ্রপশ্চাৎঅধমউত্তমঅনুকূলপ্রতিকূল
অনন্তসান্তস্বাধীনপরাধীনঅজ্ঞবিজ্ঞ
অর্পণগ্রহনঅর্থঅনর্থঅনুরাগবিরাগ
অধমর্ণউত্তমর্ণঅনুরক্তবিরক্তঅর্জনবর্জন
অভিজ্ঞঅনভিজ্ঞঅজ্ঞানসজ্ঞানঅসীমসসীম
আকাশপাতালআদানপ্রদানআকর্ষণবিকর্ষণ
আগমননির্গমনআকুঞ্চনপ্রসারণআদরঅনাদর
আদিঅন্তআয়ব্যয়আবির্ভাবতিরোভাব
আবৃতঅনাবৃতআমদানিরপ্তানিআপনপর
আসলনকলআত্মীয়অনাত্মীয়আস্তিকনাস্তিক
ইন্দ্রিয়অতীন্দ্রিয়আবশ্যকঅনাবশ্যকইহলোকপরলোক
উৎকৃষ্টঅপকর্ষঅনাশ্রয়আশ্রয়অতীন্দ্রিয়আবশ্যক
উত্তমঅধমঈর্ষাপ্রীতিউচিতঅনুচিত

বিপরীতার্থক শব্দ দ্বারা বাক্যগঠন:

মূল শব্দ

বিপরীত শব্দ

বাক্যে প্রয়োগ

১.অগ্রপশ্চাৎ

:

এ ব্যাপারে অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
২.অর্পণগ্রহণ

:

একজন দায়িত্ব অর্পণ করলেন আরেকজন দায়িত্ব গ্রহণ করলেন।
৩.আকাশপাতাল

:

তার কথা ও কাজে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
৪.আদিঅন্ত

:

তোমার কথার আদি-অন্ত কিছুই বুঝতে পারলাম না।
৫.আসলনকল

:

ভেজালে বাজার ছেয়ে গেছে, আসল-নকল চেনাই মুশকিল।
৬.কোমলকঠিন

:

তার স্বভাব যেমন কোমল তেমনি কঠিন
৭.ক্রয়বিক্রয়

:

বিদেশি পণ্যে বাজার সয়লাব, দেশি পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় তেমন একটা নেই।
৮.তিক্তমধুর

:

জীবনে তিক্ত-মধুর বহু অভিজ্ঞতাই সঞ্চিত থাকে।
৯.অর্থঅনর্থ

:

অর্থ অনর্থের মূল।
১০.আয়ব্যয়

:

আয় বুঝে ব্যয় করা উচিত।
common.content_added_by

অনুশীলনী

46
46

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: (নমুনা)

১। অনুরাগ এর বিপরীত শব্দ কোনটি?
ক. রাগান্বিত
খ. রাগের প্রকাশ
গ. বিরাগ
ঘ. অনুরক্ত

কর্ম-অনুশীলন

৪। মূল শব্দের বিপরীতে শূন্য ঘরে সঠিক বিপরীতার্থক শব্দটি ডান পাশ থেকে বেছে নিয়ে লেখ:

common.content_added_by

সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ দিয়ে বাক্য রচনা

414
414

বাংলা ভাষায় এমন কতকগুলো শব্দ আছে, যাদের উচ্চারণ এক অথবা প্রায় একই কিন্তু বানান ও অর্থ ভিন্ন। লিখিত রূপ ছাড়া মৌখিক উচ্চারণে এসব শব্দের অর্থ-পার্থক্য নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য। যেমন: 'অন্ন ও অন্য'। 'অন্ন' শব্দটির অর্থ হলো 'ভাত' আর 'অন্য' শব্দটির অর্থ হলো 'অপর'। এ ধরনের শব্দসমূহকে সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ বলে। ভাবের যথাযথ অর্থের দিকে দৃষ্টি রেখে সমোচ্চারিত শব্দের প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতনতা আবশ্যক। কারণ এ ধরনের শব্দের উচ্চারণ এক হলেও বানানে রয়েছে ভিন্নতা এবং প্রতিটি শব্দের মূলও পৃথক। এ জন্য শব্দগুলোর মধ্যে ব্যাপকভাবে অর্থ-পার্থক্য ঘটে।

নিচে উদাহরণ দেওয়া হলো:

common.content_added_by

অনুশীলনী

44
44
কর্ম-অনুশীলন

নিচের সমোচ্চারিত শব্দগুলোর অর্থের পার্থক্য দেখাও:

common.content_added_by

এক কথায় প্রকাশ

332
332

বাক্য ভাষার বৃহত্তম একক। আমরা কথা বলার সময় কিংবা লেখার সময় অনেক ক্ষেত্রে কোনো কোনো বাক্য বা বাক্যাংশকে সংক্ষিপ্ত করে থাকি। একাধিক পদ, এমনকি একটি পূর্ণ বাক্যকেও অনেক সময় একটি শব্দে প্রকাশ করা যায়। একাধিক পদকে সংক্ষিপ্ত করে একটি পদে প্রকাশ করার রীতিকে এক কথায় প্রকাশ বা বাক্য সংকোচন বলে। বস্তুত, বহুপদকে একপদে পরিণত করার মধ্য দিয়ে বাক্য বা বাক্যাংশের সংকোচন কাজ সম্পন্ন হয়।

ভাষাবিদ মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মতে, 'একাধিক পদ বা উপবাক্যকে একটি শব্দে প্রকাশ করা হলে, তাকে বাক্য সংক্ষেপণ বলে। এটি বাক্য সংকোচন বা এক কথায় প্রকাশেরই নামান্তর।'

সংজ্ঞার্থ: অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বাক্য বা বাক্যাংশকে সংকুচিত করে প্রকাশ করাকে বা একপদে পরিণত করাকে বাক্য সংকোচন বলে।

বাক্য সংকোচনের ফলে বাক্য সংক্ষিপ্ত ও শ্রুতিমধুর হয়। সংক্ষেপে ও সংহতভাবে ভাব প্রকাশ করা হলে রচনার গুণ বা মান বৃদ্ধি পায়। নিচের অংশটুকু লক্ষ করি:

বসন্তকালের দিনের শেষ ভাগ। সামনে জনবিরল বিশাল প্রান্তরদমন করা যায় না এমন উৎসাহ সবার মনে। কিছুক্ষণ চলতেই আমরা চার রাস্তার মিলনস্থলের দেখা পেলাম। একতারযুক্ত বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে একজন বাউল আসছেন।

উপরের বর্ণনায় যেসব শব্দ মোটা করে দেওয়া আছে, সেগুলোকে সংক্ষেপে প্রকাশ করে দেখি কেমন হয়:

বসন্তকালের অপরাহ্ণ। সামনে তেপান্তরঅদম্য উৎসাহ সবার মনে। কিছুক্ষণ চলতেই আমরা চৌরাস্তার দেখা পেলাম। একতারা বাজিয়ে একজন বাউল আসছেন।

বাক্য সংকোচনের নিয়ম

বাক্য বা বাক্যাংশ একাধিক পদের সমষ্টি। একাধিক পদকে একপদে পরিণত করাই বাক্য সংকোচন। নিচের রীতিগুলো অবলম্বন করে বাক্য সংকোচন করা হয়:

১. প্রত্যয়যোগে বাক্য সংকোচন: ডুবে যাচ্ছে যা ডুবন্ত (ডুব্‌ + অন্ত)। এখানে ('ডুব') ক্রিয়া-প্রকৃতির সঙ্গে 'অন্ত' প্রত্যয়যোগে 'ডুবন্ত' শব্দটি তৈরি হয়েছে।

২. সমাসযোগে বাক্য সংকোচন: পা থেকে মাথা পর্যন্ত আপাদমস্তক (অব্যয়ীভাব সমাস)। শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী (দ্বিগু সমাস)।

৩. আভিধানিক শব্দের সাহায্যে বাক্য সংকোচন: ময়ূরের ডাক = কেকা। হরিণের চামড়া = অজিন।অলংকারের ঝংকার = শিঞ্জন।

বাক্য সংকোচনের কতিপয় উদাহরণ:

অক্ষির সমক্ষে বর্তমান- প্রত্যক্ষ
অকালে পক্ক হয়েছে যা - অকালপক্ক
আয় বুঝে ব্যয় করে যে - মিতব্যয়ী
ইতিহাস রচনা করেন যিনি - ঐতিহাসিক
ঈষৎ আমিষ গন্ধ যার - আঁষটে
উপকারীর উপকার যে স্বীকার করে - কৃতজ্ঞ
উপকারীর উপকার যে স্বীকার করে না - অকৃতজ্ঞ
কোনো ক্রমেই যা নিবারণ করা যায় না - অনিবার্য
চক্ষুর সম্মুখে সংঘটিত - চাক্ষুষ
জীবিত থেকেও যে মৃত - জীবস্মৃত
নষ্ট হওয়াই স্বভাব যার- নশ্বর
পা থেকে মাথা পর্যন্ত - আপাদমস্তক
মৃতের মতো অবস্থা যার - মুমূর্ষু
যা পূর্বে ছিল এখন নেই- ভূতপূর্ব
যা দীপ্তি পাচ্ছে এমন - দেদীপ্যমান
যা জলে ও স্থলে চরে - উভচর
যা অতি দীর্ঘ নয়- নাতিদীর্ঘ
যার প্রকৃত বর্ণ ধরা যায় না- বর্ণচোরা
যা কোথাও উঁচু কোথাও নিচু - বন্ধুর
যা ক্রমশ বর্ধিত হচ্ছে- বর্ধিষ্ণু
যে গাছে ফল ধরে, কিন্তু ফুল ধরে না- বনস্পতি
যে রোগ নির্ণয় করতে হাতড়ে মরে - হাতুড়ে
যে গাছ অন্য গাছকে আশ্রয় করে বাঁচে - পরগাছা
যে ভবিষ্যৎ না ভেবেই কাজ করে রে - অবিমৃশ্যকারী
যে বন হিংস্র জন্তুতে পরিপূর্ণ - শ্বাপদসংকুল
যিনি বক্তৃতা দানে পটু - বাগ্মী
সম্মুখে অগ্রসর হয়ে অভ্যর্থনা- প্রত্যুদ্গমন
হনন করার ইচ্ছা- জিঘাংসা

common.content_added_by

অনুশীলনী

63
63

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: (নমুনা)

১। 'কোথাও উচু কোথাও নিচু' এক কথায় প্রকাশ করলে কী হয়?
ক. বন্ধুর
খ. উচু-নিচু
গ. অসমতল
ঘ. অমসৃণ

২। যিনি বক্তৃতা দানে পটু তাকে এক কথায় কী বলে?
ক. বক্তা
খ. বাচাল
গ. বাগ্মী
ঘ. মিতভাষী

কর্ম-অনুশীলন

১। বাম পাশের বাক্যগুলোর সঙ্কুচিত রূপ ডান পাশের ঘরে বসাও।

প্রদত্ত বাক্য

সঙ্কুচিত রূপ

১. অগ্রে জন্মেছে যে
২. জয় করার ইচ্ছা
৩. উপকার করার ইচ্ছা
৪. জয়সূচক উৎসব
৫. মধু পান করে যে
৬. যিনি ব্যাকরণে পণ্ডিত
৭. শুভক্ষণে জন্ম যার
৮. যার মরণাপন্ন অবস্থা
৯. প্রিয় কথা বলে যে (নারী)
১০. হাতির ডাক
common.content_added_by

বাগধারা

117
117

বাগধারা মূলত বিশিষ্ট অর্থবোধক একধরনের বাক্যাংশ বা শব্দগুচ্ছ। 'বাগধারা' শব্দের অর্থ কথা বলার 'বিশেষ ঢং' বা 'রীতি'। বাগ্ধারার সাহায্যে বিশেষ ধরনের অর্থবোধক শব্দ বা শব্দগুচ্ছ গঠিত হয়। বাগ্ধারা ইংরেজি 'ইডিয়ম' (Idiom) শব্দের সমার্থক।

পৃথিবীর সব ভাষাতেই বিশিষ্টার্থবোধক শব্দ বা শব্দগুচ্ছের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। বাংলাতেও অজস্র বাগধারা আছে। বাংলা ভাষার অনেক শব্দই তাদের নিজস্ব অর্থ ছাড়াও বিশিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইঙ্গিতবহ ও সূক্ষ্ম তাৎপর্যমণ্ডিত। যেমন: 'অর্ধচন্দ্র' বলতে 'অর্ধেক চাঁদ' না বুঝিয়ে 'গলাধাক্কা' বোঝায়। অনুরূপ 'তাসের ঘর' বলতে 'তাস দ্বারা নির্মিত ঘর' না বুঝিয়ে 'ক্ষণস্থায়ী' কোনো কিছুকে বোঝায়। সুতরাং আক্ষরিক অর্থকে ছাপিয়ে যখন কোনো শব্দ বা শব্দগুচ্ছ বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে, তখন তাকে বাগধারা বলে।

বাগধারা ভাষা ব্যবহারের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে উৎসারিত। এর নেপথ্যে ব্যক্তিক ও সামাজিক নানা ঘটনা বা প্রসঙ্গ যুক্ত হয়ে থাকে। বাগধারা ভাষার একটি গৌরবময় ঐতিহ্য। যে জাতির ভাষা যত প্রাচীন, সে জাতির ভাষায় বাগধারার ব্যবহার তত বেশি। বাংলা ভাষার হাজার বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। তাই বাঙালির মননগত অভিব্যক্তি প্রকাশের জন্য অজস্র বাগধারা সৃষ্টি হয়েছে।

টনক নড়া (চৈতন্যোদয় হওয়া) প্রথম সাময়িক পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় তার টনক নড়ল
ঠোঁট কাটা (স্পষ্টভাষী) আফাজ মিঞার মুখে কিছুই আটকায় না, ঠোঁট কাটা যাকে বলে।
ডুমুরের ফুল (অদৃশ্য বস্তু) চাকরি পেয়ে ডুমুরের ফুল হয়ে উঠলে যে দেখাই পাওয়া যায় না।
ঢাকের কাঠি (মোসাহেব) তুমি তো বড় সাহেবের ঢাকের কাঠি, তিনি যা বলেন তুমিও তাই বল।
তীর্থের কাক (সাগ্রহে প্রতীক্ষাকারী) প্রবাসী ছেলের বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষায় বাবা-মা তীর্থের কাকের মতো বসে আছেন।
থ বনে যাওয়া (স্তম্ভিত হওয়া) তার কাণ্ড দেখে আমি তো থ বনে গেলাম।
দহরম মহরম (ঘনিষ্ঠতা) ম্যানেজারের সঙ্গে আজমল সাহেবের খুব দহরম মহরম
দুধের মাছি (সুসময়ের বন্ধু) টাকা থাকলে দুধের মাছির অভাব হয় না।
ধামাধরা (চাটুকারিতা) সমাজে ধামাধরা লোকের অভাব নেই।
নয় ছয় (অপচয়) জাভেদ জমি বিক্রির টাকাগুলো নয় ছয় করে ফেলল।
পুকুর চুরি (বড় রকমের চুরি) অসাধু কর্মচারীরা পুকুর চুরি করে ব্যবসায় লালবাতি জ্বালিয়েছে। -
বকধার্মিক/ বিড়াল তপস্বী (ভণ্ড সাধু) মুখে নীতিবাক্য আওড়ালেও লোকটা আসলে বকধার্মিক/বিড়াল -তপস্বী।
ভরাডুবি (সর্বনাশ) দোকানে আগুন লেগে ফজলু মিঞার ভরাডুবি হয়েছে।
ভিজে বিড়াল (কপটচারী) সে একজন ভিজে বেড়াল, তাকে চেনা সহজ নয়।
যক্ষের ধন (কৃপণের কড়ি) যক্ষের ধনের মতো সে তার টাকাকড়ি আগলে আছে, কাউকে দুই পয়সার সাহায্যও করে না।
রাঘব বোয়াল (সর্বগ্রাসী ক্ষমতাসীন ব্যক্তি) উচ্চপদে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যদি রাঘব বোয়াল হয়, তবে দেশের উন্নতি হবে কেমন করে?
লেফাফাদুরস্ত (বাইরের ঠাট বজায় রেখে চলেন যিনি) আলম মিঞা এমন লেফাফাদুরস্ত যে বাইরে থেকে দারিদ্র্য বোঝা যায় না।
শাঁখের করাত (উভয় সংকট) সত্য বললে বাবা বিপদে পড়েন, আর মিথ্যে বললে মা বিপদে পড়েন-আমি পড়েছি শাঁখের করাতে।
শাপে বর (অনিষ্টে ইষ্ট লাভ) বড় সাহেব হারুনকে শাস্তি না দিয়ে দিলেন প্রমোশন, একেই বলে শাপে বর। -
হ-য-ব-র-ল (বিশৃঙ্খলা) জিনিসপত্র ছড়িয়ে ঘরটাকে তো একেবারে হ-য-ব-র-ল করে রেখেছ।
হাতের পাঁচ (শেষ সম্বল) হাতের পাঁচ এ কটি টাকা দিয়েই আমাকে বাকি কটা দিন চলতে হবে।

common.content_added_by

অনুশীলনী

55
55

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: (নমুনা)

১। 'কৈ মাছের প্রাণ' বলতে কী বুঝায়?
ক. যা সহজে মরে না
খ. এক জাতের মাছ
গ. মাছের প্রাণ স্থায়ী নয়
ঘ. কৈ মাছ খুব শক্তিশালী

২। নিচের কোন বাক্যে অর্ধচন্দ্র বাগধারার সঠিক প্রয়োগ হয়েছে?
ক. বালকটিকে অর্ধচন্দ্র দেখাও।
খ. চোরটিকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বের করো।
গ. আকাশে অর্ধচন্দ্র দেখা যায়।
ঘ. মা শিশুকে অর্ধচন্দ্র দেখাচ্ছে।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion