ইতোমধ্যে তোমরা জেনেছ যে হরমোন এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ; যা নালিহীন গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। এটি রাসায়নিক দূত হিসেবে সরাসরি রন্ত্রের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেহের বিভিন্ন বিপাকীয় ও শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া ঘটাতে সাহায্য করে। হরমোন নির্দিষ্ট অথচ স্বল্পমাত্রায় নিঃসৃত হয়ে নানাবিধ শারীরবৃত্তীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি বা কম নিঃসরণ হলে দেহের বিভিন্ন কাজের ব্যাঘাত ঘটে। দেহে নানা রকম অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।
আমাদের শরীরে নিম্নলিখিত গ্রন্থিগুলো প্রজনন-সংক্রান্ত হরমোন নিঃসরণ করে:
(i) পিটুইটারি গ্রন্থি (Pituitary gland)
(ii) থাইরয়েড গ্রন্থি (Thyroid gland)
(iii) অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি (Adrenal gland)
(iv) শুক্রাশয়ের অনালগ্রন্থি (Testis)
(v) ডিম্বাশয়ের অনালগ্রন্থি (Ovary)
(vi) অমরা (Placenta)।
পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন ধরনের বৃদ্ধি উদ্দীপক হরমোন এবং উৎপাদক হরমোন নিঃসৃত হয়। এ হরমোনগুলো জননগ্রন্থির বৃদ্ধি, ক্ষরণ এবং কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, মাতৃদেহে স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি এবং দুগ্ধ ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া এগুলো জরায়ুর সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন নিঃসৃত হয়। এ হরমোন দৈহিক এবং মানসিক বৃদ্ধি, যৌনলক্ষণ প্রকাশ এবং বিপাকে সহায়তা করে। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত কিছু হরমোন যৌনাঙ্গ বৃদ্ধি ও যৌনলক্ষণ প্রকাশে সহায়তা করে। শুক্রাশয় থেকে নিঃসৃত টেস্টোস্টেরন ও অ্যান্ড্রোজেন শুক্রাণু উৎপাদন, দাড়ি-গোঁফ গজানো, গলার স্বর পরিবর্তন ইত্যাদি যৌনলক্ষণ প্রকাশে সহায়তা করে। ডিম্বাশয় থেকে নিঃসৃত ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন মেয়েদের নারীসুলভ লক্ষণগুলো সৃষ্টি, ঋতুচক্র নিয়ন্ত্রণ এবং গর্ভাবস্থায় জরায়ু, ভ্রূণ, অমরা ইত্যাদির বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া ডিম্বাণু উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অমরা থেকে নিঃসৃত গোনাডোট্রপিন ও প্রোজেস্টেরন ডিম্বাশয়ের অনাল গ্রন্থিকে উত্তেজিত করে এবং স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।
মানবশিশু জন্মগ্রহণের সময় তাদের প্রজননতন্ত্র অপরিণত অবস্থায় তাকে। শিশু তার বাল্যকাল অতিক্রম করে কৈশোর এবং তারুণ্যে উপনীত হয়। কৈশোর এবং তারুণ্যের সন্ধিকালই হলো বয়ঃসন্ধিকাল। এ সময় ছেলেমেয়েদের দৈহিক, মানসিক এবং যৌন বৈশিষ্ট্যগুলোর বিকাশ ঘটে। তাদের প্রজননতন্ত্রের অঙ্গগুলোর বৃদ্ধি এবং বিকাশ ঘটতে শুরু করে। হরমোন এসব কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাদের দেহের বাইরে এবং ভিতরে পরিবর্তন ঘটে, যেমন: ছেলেদের গোঁফ-দাড়ি গজায়, গলার স্বর পরিবর্তন হয় এবং কাঁধ চওড়া হয়।
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের দেহে যেসব পরিবর্তন দেখা যায় তা হলো: দেহত্বক কোমল হয়, চেহারায় কমনীয়তা বৃদ্ধি পায় এবং ঋতুস্রাব বা মাসিক হয়। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে মেয়েদের নির্দিষ্ট সময় পরপর রক্তস্রাব হয়। একে মাসিক বা ঋতুস্রাব বলে। বয়ঃসন্ধিকালের 1-2 বছর পর মেয়েরা প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে। সাধারণত 40-50 বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েদের ঋতুস্রাব চক্র চলতে থাকে। এরপর ঋতুস্রাব চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। একে মেনোপজ (Menopause) বা রজনিবৃত্তিকাল বলে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি মনে রাখা দরকার, গর্ভাবস্থায় মেয়েদের রক্তস্রাব সাময়িক বন্ধ থাকে। সন্তান প্রসবের প্রায় দেড় মাস পর আবার স্বাভাবিক রক্তস্রাব শুরু হয়।
বিয়ে একটি সামাজিক, ধর্মীয় এবং পারিবারিক বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ প্রচেষ্টায় একটি পরিবার গড়ে ওঠে। তাঁরা দুজনে নির্দ্বিধায় মেলামেশা করতে পারে। তাদের মাঝে প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা মেনে চলা দরকার। মেয়েদের 20 বছর বয়সের আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উচিত নয়। বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েরা অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করে। এর ফলে গর্ভবতী মা এবং সন্তান উভয়েরই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক সম্পর্কের মাধ্যমে পুরুষের শুক্রাণু স্ত্রী প্রজনন অঙ্গে প্রবেশ করে। শুক্রাণুতে লেজ থাকে। যা তাকে সাঁতরিয়ে স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের ভিতর প্রবেশ করতে সাহায্য করে। পরিণত শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর মিলন ঘটে স্ত্রীর ডিম্বনালিতে। এ মিলনকে নিষেক বলে। তবে জেনে রাখা প্রয়োজন, একটি শুক্রাণু দিয়ে একটিমাত্র ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়। এভাবে মানবদেহের ভিতরে অন্তঃনিষেক ঘটে। এ বিশেষ পদ্ধতিতে শুক্রাণুর একপ্রস্থ ক্রোমোজোম (n) ও ডিম্বাণুর একপ্রস্থ ক্রোমোজোমের (n) মিলন ঘটে, ফলে দুই প্রস্থ ক্রোমোজোমের (2n) সমন্বয়ে জাইগোট (Zygote) উৎপন্ন হয়।
common.read_more