ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া (পাঠ ৩-৪)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান নিম্নশ্রেণির জীব | - | NCTB BOOK
186
186

ভাইরাস, রিকেটস, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের অণুজীব আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এরা অধিকাংশই আমাদের উপকার করে। তবে কিছু কিছু অণুজীব আছে যারা আমাদের দেহে রোগ সৃষ্টি করে। এবার আমরা কয়েকটি অণুজীব সম্পর্কে জানব।

চিত্র-১.১: একটি
ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস কণিকা

ভাইরাস: ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া ভাইরাসদেরকে দেখা যায় না। এরা সরলতম গঠনের। ভাইরাসের দেহে কোষপ্রাচীর, প্লাজমালেমা, সুসংগঠিত নিউক্লিয়াস, সাইটোপ্লাজম ইত্যাদি কিছুই নেই। তাই ভাইরাস দেহকে অকোষীয়ও বলা হয়। এরা শুধুমাত্র আমিষ আবরণ ও নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ বা আরএনএ) নিয়ে গঠিত। এদের আমিষ আবরণ থেকে নিউক্লিক অ্যাসিড বের হয়ে গেলে এরা জীবনের সকল লক্ষণ হারিয়ে ফেলে। তবে অন্য জীবদেহে যেইমাত্র আমিষ আবরণ ও নিউক্লিক অ্যাসিডকে একত্র করা হয়, তখনি এরা জীবনের সব লক্ষণ ফিরে পায়। অর্থাৎ জীবিত জীবদেহ ছাড়া বা জীবদেহের বাইরে এরা জীবনের কোনো লক্ষণ দেখায় না। এ কারণে ভাইরাস প্রকৃত পরজীবর্তী

ভাইরাসদের মধ্যে ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস একটি পরিচিত ভাইরাস। চিত্র ১.১ এ এদের গঠন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো।

ভাইরাস গোলাকার, দণ্ডাকার, ব্যাঙাচির ন্যায় ও পাউরুটির ন্যায় হতে পারে। ভাইরাস মানবদেহে বসন্ত, হাম, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে। বসন্ত, হাম, সর্দি ইত্যাদি বায়ুবাহিত রোগ। ধানের টুংরো ও তামাকের মোজাইক রোগ ভাইরাসের কারণে হয়।

ভাইরাসের উপকারিতা: বিভিন্ন রোগ যেমন বসন্ত, পোলিও ও প্লেগের টিকা ভাইরাস থেকে তৈরি হয়। জিন প্রকৌশলে ভাইরাস ব্যবহৃত হয়। কিছু ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ থেকে পরোক্ষভাবে রক্ষা করে।

ভাইরাসের অপকারিতাঃ মানবদেহে কোভিড-১৯, বসন্ত, হাম, জলাতঙ্ক, এইডস প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে। উদ্ভিদের বিভিন্ন রোগ যেমন: তামাকের মোজাইক রোগ, ধানের টুংরো রোগ ইত্যাদি সৃষ্টি করে।

ব্যাকটেরিয়া: ব্যাকটেরিয়ার কিছু কথা আমরা পূর্বের শ্রেণিতে জেনেছি। এবার একটু বিস্তারিত জানব। ব্যাকটেরিয়া হলো আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, অসবুজ, এককোষী অণুবীক্ষণিক জীব।

বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফন লিউয়েন হুক সর্বপ্রথম ব্যাকটেরিয়া দেখতে পান। ব্যাকটেরিয়া কোষ গোলাকার, দণ্ডাকার, কমা আকার, প্যাঁচানো ইত্যাদি নানা ধরনের হতে পারে। দেহের আকার আকৃতির ভিত্তিতে একে নিম্নরূপে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়:

ক) কক্কাস (চিত্র-১.২): কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়া কোষের আকৃতি গোলাকার। এরা কক্কাস ব্যাকটেরিয়া। এরা এককভাবে অথবা দলবেঁধে থাকতে পারে, যেমন-নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া।

খ) ব্যাসিলাস (চিত্র-১.৩): এরা দেখতে লম্বা দণ্ডের ন্যায়। ধনুষ্টংকার, রক্তামাশয় ইত্যাদি রোগ এরা সৃষ্টি করে।

গ) কমা (চিত্র-১.৪): এরা বাঁকা দণ্ডের ন্যায় আকৃতির ব্যাকটেরিয়া। মানুষের কলেরা রোগের ব্যাকটেরিয়া এ ধরনের।

ঘ) স্পাইরিলাম: এ ধরনের ব্যাকটোরিয়ার আকৃতি প্যাঁচানো।

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা

  • মৃত জীবদেহ ও আর্বজনা পচাতে সাহায্য করে।
  • একমাত্র ব্যাকটেরিয়াই প্রকৃতি থেকে সরাসরি মাটিতে নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে।
  • পাট থেকে আঁশ ছাড়াতে ব্যাকটেরিয়া সাহায্য করে।
  • দই তৈরি করতেও ব্যাকটেরিয়ার সাহায্য নিতে হয়।
  • বিভিন্ন জীবন রক্ষাকারী এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি হয়।
  • ব্যাকটেরিয়া জীন প্রকৌশলের মূল ভিত্তি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবের কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য পাওয়ার জন্য জীনগত পরিবর্তনের কাজে ব্যাকটেরিয়াকে ব্যবহার করা হয়।

চিত্র- ১.৫: স্পাইরিলাম

ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা: ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে যক্ষ্মা, কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে। এরা খাদ্যদ্রব্য, ফলমূলের পচন ঘটায়। উদ্ভিদে বিভিন্ন রোগ যেমন: ধানের লিফ ব্লাইট, টমেটোর ক্যাংকার ইত্যাদি ঘটায়।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion