বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ, প্রভাব ও সমাধান পদক্ষেপ (পাঠ ৬)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিতি | - | NCTB BOOK
191
191

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। পৃথিবীর এই ছোটো দেশটিতে জনসংখ্যা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। এদেশে ১৯৭৪ সালে জনসংখ্যা ছিল ৭.৬৪ কোটি, ১৯৯১ সালে ছিল ১১.১৫ কোটি, ২০০১ সালে ছিল ১২ কোটি ৯৩ লাখ, ২০০৭ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৬ লাখ এবং ২০১১ সালে এ সংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লক্ষ ৭২ হাজার ৩৬৪ জন। ২০২২ সালে ১৬ কোটি ৯৮ লক্ষ ২৮ হাজার ৯শত ১১জন। ২০০১ সালে প্রতিবর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ৮৩৪জন। ২০০৫, ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১৭ও ২০২২ সালে জনসংখ্যা ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৯০৪, ৯৫৩, ৯৯০, ১০১৫, ১১০৩ ও ১১১৯ জনে দাঁড়ায়। তাহলে এখন আমরা বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ জানব।

common.content_added_and_updated_by

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ (৬.১)

133
133

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কোনো একক কারণ নেই। অনেক কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে। তার মধ্যে কয়েকটি প্রধান কারণ এখানে উল্লেখ করা হলো।

জনসংখ্যা হ্রাসবৃদ্ধির মুখ্য কারণ হচ্ছে জন্ম ও মৃত্যু। বাংলাদেশে স্কুল জন্মহার ও স্থূল মৃত্যুহারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এদেশে স্কুল শিশু মৃত্যুহার উন্নত চিকিৎসা, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি প্রভৃতি কারণে হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে জনসংখ্যা বেড়েই চলছে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, এদেশে প্রতিবছর জন্ম নিচ্ছে ২৫ লক্ষ শিশু এবং মৃত্যুবরণ করছে সকল বয়সের প্রায় ৬ লক্ষ লোক। ফলে প্রতি বছর ১৯ লক্ষ লোক বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো উচ্চ জন্মহার ও নিম্ন মৃত্যুহার।

এদেশে বাল্যবিবাহ, বহু বিবাহ, ধর্মীয় কুসংস্কার এবং আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়মিত ব্যবহার না করা প্রভৃতি কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া ছেলে সন্তানের প্রত্যাশা, দারিদ্র, নারীশিক্ষার অভাব, অজ্ঞতা ও কুসংস্কার প্রভৃতি কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এসব কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, কার্যক্রম বাস্তবায়নে তৎপরতার অভাব, কার্যকর প্রচারণার অভাব প্রভৃতি কারণেও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ও বাস্তবায়নের ধীরগতি, কর্মক্ষম নারী পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ত্বরান্বিত না করার কারণেও জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

common.content_added_by

জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব (৬.২)

56
56

তোমরা চতুর্থ, পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে জেনেছ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এদেশে নির্ভরশীল জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আগামী তিন দশকে এদেশে নির্ভরশীল জনসংখ্যা ৪০% এবং কর্মক্ষম জনসংখ্যা ৬০% এর কাছাকাছি থাকবে। এখন এই কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে কর্ম দক্ষ করে গড়া তুলে কাজে লাগালে দেশ খুব দ্রুত উন্নতি লাভ করবে।

অধিক জনসংখ্যার কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, নিরাপত্তা, বিনোদন প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। অধিক জনসংখ্যা নানাবিধ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। এই জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত না করতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে দেশ পিছিয়ে যাবে।

common.content_added_by

জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে করণীয় (৬.৩)

64
64
  • জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন। তাছাড়া বিবাহের ক্ষেত্রে আইননুগ বয়সের (ছেলেদের ২১ ও মেয়েদের ১৮ বছর) প্রয়োগ কার্যকর করা।
  • প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের উৎপাদনমুখী কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন এবং ছোটো পরিবার গঠনে উদ্বুদ্ধ করা।
  • জনসম্পদকে মানবসম্পদে রূপান্তর করা। এই মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য সেবা, বাসস্থান ব্যবস্থা উন্নয়ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ শুধু দেশের জন্য নয় বরং বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড়ো ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারবে।
কাজ-১: জনসংখ্যা সমস্যার কারণগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পদক্ষেপগুলো লিখ।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion