অর্থনৈতিক মূল্য রয়েছে এমন যে-কোনো কাজ, সেবা বা বিনিময়কে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বলা হয়। আর যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেসব কাজের জন্য পূর্ব মজুরি নির্ধারিত নয়, করের আওতায় আনাও কঠিন এবং যেসব অর্থনৈতিক কার্যক্রম সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয়, সংক্ষেপে অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রম বলতে সেগুলোকেই বোঝায়। যেমন: নিজের জমি, দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ, গৃহস্থালি কর্ম, হকারি, দিনমজুরি প্রভৃতি। অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের বেশির ভাগ অর্থনৈতিক কার্যক্রম এই অনানুষ্ঠানিক খাতের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। অতীতকাল থেকে চলে আসছে বলে অনেকে এসব কাজকে অর্থনীতির প্রথাগত খাতও বলে থাকেন।
গ্রামাঞ্চলের অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কার্যাবলী
বিশ্বের অন্য যেকোনো উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও অনানুষ্ঠানিক খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গ্রামের একজন চাষি ও তার পরিবারের সদস্যরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে কাজ করেন। নিজেদের জমিতে কাজ করার জন্য তারা কোনো মজুরি পান না বা নেন না। কিন্তু তাদের সে কাজ বা পরিশ্রমের ফলে কেবল তাদের পরিবারই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রও উপকৃত হচ্ছে। দেশের মোট খাদ্য চাহিদার বড়ো অংশটা তারাই উৎপাদন করছে। এভাবে আমাদের কৃষকরা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কামার-কুমোরের কাজ, গ্রামের কুটির শিল্প, দোকান ও অন্যান্য ছোটখাটো ব্যবসাও অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কাজের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এসব কাজও মূল্যবান ভূমিকা পালন করছে। সাম্প্রতিককালে কৃষিসহ গ্রামীণ অর্থনীতিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার লক্ষ করা গেলেও প্রথাগত বা অনানুষ্ঠানিক খাতটি এখনও প্রধান ভূমিকায় রয়েছে। জাতীয় অর্থনীতির দিক থেকে বিবেচনা করলেও এই খাতটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
শহরাঞ্চলের অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কার্যাবলী
বাংলাদেশের শহরগুলোতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীন সকল শ্রেণির মানুষই বাস করে। বিত্তহীনদের মধ্যে অনেকে আবার ভাসমান বা অস্থায়ী। অর্থাৎ তাদের নিজস্ব বা স্থায়ী বাসাবাড়ি নেই। তারা বস্তি, ফুটপাত, পার্ক, রেলস্টেশন ইত্যাদি স্থানে বাস করে। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা সাধারণত আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কাজ যেমন সরকারি ও বেসরকারি চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিতে নিয়োজিত। নিম্নবিত্ত ও বিত্তহীনরা ছোটোখাটো দোকান, ফুটপাতে হকারি, ফেরিওয়ালা, রিকশা বা ঠেলাগাড়ি চালক, মুটে, মিস্ত্রি, জোগালি, কিংবা বাসাবাড়ির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এগুলোকে শহর অঞ্চলের অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কাজ বলে গণ্য করা হয়।
অর্থনীতিতে অনানুষ্ঠানিক খাতের অবদান
গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে ও শ্রমে ধান-পাট, রবিশস্য, শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন, মাছ ধরা, গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন, কুটিরশিল্প, হাটবাজারে পণ্য বিক্রি করার মাধ্যমে তাদের জীবিকার সংস্থানই করছে। শুধু তাই নয়, তারা দেশের অর্থনৈতিক জীবনকে সচল রাখার ক্ষেত্রেও প্রধান ভূমিকা পালন করছে। একইভাবে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী স্বল্প ও মাঝারি এমন কি উচ্চ আয়ের অনেক মানুষও অনানুষ্ঠানিক খাতের অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। এভাবে প্রথম থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি অনানুষ্ঠানিক খাতের উপর বেশি নির্ভরশীল। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক খাতের ভূমিকা বৃদ্ধি ও তা জোরদার হওয়ার পরও আমাদের অর্থনীতিতে প্রথাগত বা অনানুষ্ঠানিক খাতের গুরুত্ব কমেনি।
কাজ-১: তোমার এলাকার যেকোনো একটি অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক কাজের বিবরণ দাও। জাতীয় অর্থনীতিতে তা কীভাবে অবদান রাখে ব্যাখ্যা কর। |
common.read_more