প্রাণিটিস্যুর বৈশিষ্ট্য ও কাজ (পাঠ ৮-১১)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান উদ্ভিদ ও প্রাণীর কোষীয় সংগঠন | - | NCTB BOOK
474
474

আমরা কীভাবে হাঁটাচলা করি, কীভাবে খাবার খাই, কীভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেই লক্ষ কর। এ কাজগুলো যেমন আলাদা তেমনি ভিন্ন প্রকৃতির। আমরা পা দিয়ে হাঁটি, হাত দিয়ে লিখি, মুখ দিয়ে খাবার খাই, দাঁত দিয়ে খাবার চিবাই। এ কাজগুলো করে আলাদা আলাদা অঙ্গ। এই অঙ্গগুলোর কোষের গঠন ও কাজ আলাদা। আমাদের দেহের হাড়, মাংস, মস্তিষ্ক ইত্যাদি অনেকগুলো কোষ দিয়ে তৈরি যাদের গঠন ও কাজ ভিন্ন প্রকৃতির। বহুকোষী প্রাণীতে এভাবে অনেকগুলো কোষ যখন কোনো নির্দিষ্ট কাজ করে তখন ঐ কোষগুলোকে একত্রে টিস্যু (tissue) বা কলা বলা হয়। এসব কোষের উদ্দেশ্য এক হলেও এদের আকার, আয়তন ও গঠন ভিন্ন হতে পারে। এটা নির্ভর করে টিস্যু ও কোষের কাজের ধরনের উপর। প্রাণিদেহ বিভিন্ন প্রকার টিস্যু দিয়ে গঠিত। টিস্যু সাধারণত চার ধরনের হয়। যথা-

ক. আবরণী টিস্যু
খ. পেশি টিস্যু
গ. যোজক টিস্যু
ঘ. স্নায়ু টিস্যু

ক. আবরণী টিস্যু বা এপিথিলিয়াল টিস্যু

যে টিস্যু দেহের খোলা অংশ ঢেকে রাখে এবং দেহের ভিতরের আবরণ তৈরি করে তাকে আবরণী টিস্যু বলে। আমাদের ত্বকের বাইরের আবরণ মুখগহ্বরের ভিতরের আবরণ ইত্যাদি আবরণী টিস্যু দিয়ে গঠিত। দেহের বিভিন্ন গ্রন্থিগুলোও আবরণী টিস্যু দিয়ে তৈরি।

আবরণী টিস্যুর বৈশিষ্ট্য

  • আবরণী টিস্যুগুলো এক বা একাধিক স্তরে সাজানো থাকে।
  • কোষগুলো একটি পাতলা ভিত্তি পর্দার উপর সাজানো থাকে।
  • এধরনের কলাতে কোনো আন্তঃকোষীয় ধাত্র (matrix) থাকে না।

কাজ: এ টিস্যু দেহের ভিতরের ও বাইরের অঙ্গগুলোকে আঘাত থেকে রক্ষা করে। পাকস্থলি ও অন্ত্রের আবরণী কলা পাচকরস ক্ষরণ করে।

খ. পেশি টিস্যু বা মাসকুলার টিস্যু
দেহের কোনো কোনো পেশি আমরা ইচ্ছামত চালনা করতে পারি। যেমন- হাত বা পায়ের পেশি। এ পেশিগুলো আমরা যেভাবে চালাতে চাই সেভাবেই চলে। আবার দেহের কোনো কোনো পেশি আমরা ইচ্ছামতো চালনা করতে পারি না। এ ধরনের পেশি তাদের নিজের ইচ্ছামতো চলে। যেমন- পাকস্থলির পেশি।

এ আলোচনা থেকে জানলাম পেশি তিন প্রকার। যথা-

১. ঐচ্ছিক পেশি এবং
২. অনৈচ্ছিক পেশি
৩. হৃদ পেশি

কাজ: তোমার হাতের কনুই বাঁকাও ও সোজা কর। এতে তোমার হাতের পেশির কী পরিবর্তন ঘটছে? কেন পরিবর্তন ঘটছে? কীভাবে এ পরিবর্তন ঘটছে? লক্ষ কর এবং লিখে শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।

১. ঐচ্ছিক পেশি

আমরা যখন কনুই বাঁকা করি তখন ঊর্ধ্ব বাহুর সামনের দিকের পেশি সংকুচিত হয়ে নিম্ন বাহুকে টেনে বাঁকা করে। যে পেশি আমরা ইচ্ছামতো সংকুচিত ও প্রসারিত করে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সঞ্চালন করতে পারি, তাকে ঐচ্ছিক পেশি বলে। মানবদেহে ঐচ্ছিক পেশির সংখ্যা বেশি। এ পেশি হাড়ের সাথে লেগে থেকে আমাদের অঙ্গ নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। তাই এধরনের পেশিকে কঙ্কাল পেশিও বলা হয়।

২. অনৈচ্ছিক পেশি

আমাদের খাদ্যনালিতে খাদ্য পরিবহনের দায়িত্ব পালন করছে অন্ত্রের পেশি। এ ধরনের পেশির উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অর্থাৎ যেসব পেশি আমাদের ইচ্ছামতো সংকুচিত হয় না, তাদের অনৈচ্ছিক পেশি বলে

৩. হৃদপেশি: হৃদপেশি নামে আরেক ধরনের পেশি আছে। এ পেশি নিজ ছন্দে পর্যায়ক্রমে সংকুচিত হয়ে দেহের রক্ত সঞ্চালন করে। শুধু হৃদপিন্ড এই পেশি দ্বারা গঠিত। এই পেশি দেখতে অনেকটা ঐচ্ছিক পেশির মতো হলেও কাজে অনৈচ্ছিক।

পেশির কাজ:

  • দেহের আকৃতি দান করে ও অস্থি সঞ্চালনে সহায়তা করে।
  • নড়াচড়া ও চলাচলে সাহায্য করে।
  • দেহের ভিতরের অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে।
  • হৃৎপেশি দেহে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে।
কাজ: একটি টেবিলের উপর এমনভাবে বস যাতে পা'দুটো ঝুলে থাকে। হাঁটুর নিচ থেকে একটি পা সোজা কর। আবার একটু বাঁকাও। কোন পেশিগুলো এই নড়াচাড়ায় অংশ নিচ্ছে? হাত দিয়ে ধরে বোঝার চেষ্টা কর এবং কী বুঝলে তা শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।

গ) যোজক টিস্যু
যোজক টিস্যু প্রাণিদেহের বিভিন্ন টিস্যু এবং অঙ্গের মধ্যে সংযোগ সাধন করে। এই টিস্যু প্রধানত কঠিন, তরল ও মেদময় হয়। যেমন-রক্ত, হাড়, তরুণাস্থি, মেদময় কলা ইত্যাদি যোজক টিস্যুর উদাহরণ।

যোজক টিস্যুর কাজ

হাড়ের গঠনের একটি প্রধান উপাদান হলো ক্যালসিয়াম। হাড় দেহের কাঠামো গঠন করে, দেহের ভার বহন করে ও দৃঢ়তা দান করে। পেশিবন্ধনী বা টেন্ডন পেশিকে হাড়ের সাথে যুক্ত করে, মেদ টিস্যু স্নেহ পদার্থ সঞ্চিত রাখে। তন্ত্রময় যোজক টিস্যু ফুসফুস ও রক্তনালির প্রাচীর সংকোচন ও প্রসারণে সাহায্য করে। তরুণাস্থি হাড়ের চেয়ে নরম ও অন্যান্য টিস্যুর চেয়ে বেশি চাপ ও টান সহ্য করতে পারে। যেমন- নাক ও কানের তরুণাস্থি। রক্ত বিভিন্ন দ্রব্যাদি (অক্সিজেন, খাদ্য, রেচন পদার্থ) দেহের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহন করে। এছাড়া রক্ত রোগজীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ করে। রক্ত তরল যোজক টিস্যু।

ঘ) স্নায়ুটিস্যু বা নার্ভটিস্যু

প্রাণী দেহের যে টিস্যু উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে উপযুক্ত প্রতিবেদন সৃষ্টি করতে পারে তাকে স্নায়ুটিস্যু বা নার্ভটিস্যু বলে। স্নায়ুটিস্যুর একক হচ্ছে স্নায়ুকোষ বা নিউরন। মস্তিষ্ক অসংখ্য স্নায়ুকোষ বা নিউরন দিয়ে তৈরি।
প্রতিটি নিউরন তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- (ক) কোষদেহ (খ) ডেনড্রন এবং (গ) অ্যাক্সন।

স্নায়ুটিস্যুর কাজ

  • দেহের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় ও সংবেদন গ্রহণকারী অঙ্গ থেকে গৃহীত উদ্দীপনা মস্তিষ্কে প্রেরণ করে।
  • দেহের কার্যকর অংশ এ উদ্দীপনায় সাড়া দেয়। যেমন- মশা কামড়ালে এ অনুভূতি মস্তিষ্কে পাঠায়। মস্তিষ্ক হাতকে এ কথা জানায় তখন হাত মশা মারার চেষ্টা করে।
  • উদ্দীপনা বা ঘটনাকে স্মৃতিতে ধারণ করে।
  • দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

কাজ: তুমি চোখ বন্ধ কর। কিছু দেখতে পাচ্ছ কি? কান হাত দিয়ে বন্ধ কর। কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? তুমি পড়া মনে রাখ কীভাবে? এই কাজগুলো করতে তোমার দেহের কোন টিস্যু সাহায্য করে, তার একটি কোষের চিত্র অঙ্কন কর ও এর বিভিন্ন অংশের নাম লিখ।

এ অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম

  • জীবদেহের গঠনগত ও কার্যগত এককের নাম কোষ।
  • বিজ্ঞানী রবার্ট হুক প্রথম কোষ আবিষ্কার করেন।
  • কোষ মধ্যস্থ সম্পূর্ণ সজীব অংশকে প্রোটোপ্লাজম বলে।
  • সাইটোপ্লাজমের মধ্যে অবস্থিত সজীব অঙ্গাণুগুলোর নাম যথাক্রমে নিউক্লিয়াস, প্লাস্টিড, মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগিবস্তু, সেন্ট্রিওল ইত্যাদি।
  • প্লাস্টিড তিন প্রকার। যথা- ক্লোরোপ্লাস্টিড, ক্রোমোপ্লাস্টিড ও লিউকোপ্লাস্টিড।
  • মাইটোকন্ড্রিয়াকে শক্তির ঘর বলা হয় কারণ শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি মাইটোকন্ড্রিয়াতে সঞ্চিত থাকে।
  • উৎপত্তির দিক থেকে এক হয়ে সম আকৃতির অথবা ভিন্ন আকৃতির কোষগুলো যদি দলগতভাবে একই ধরনের কাজ করে, তখন সেই দলবদ্ধ কোষগুচ্ছকে টিস্যু বলে।
  • টিস্যু প্রধানত দুই প্রকার- ভাজক টিস্যু ও স্থায়ী টিস্যু। ভাজক টিস্যু থেকে স্থায়ী টিস্যুর উৎপত্তি।
  • যে টিস্যুর কোষগুলো ক্রমাগত বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ সৃষ্টি করে তাকে ভাজক টিস্যু বলে।
  • ভাজক টিস্যু থেকে উৎপন্ন বিভাজন ক্ষমতাহীন নির্দিষ্ট আকৃতিযুক্ত পরিণত টিস্যুকে স্থায়ী টিস্যু বলে।
  • হৃৎপেশি এক ধরনের বিশেষ অনৈচ্ছিক পেশি।
  • রক্ত এক ধরনের যোজক কলা।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion