তাপ সঞ্চালন (পাঠ ৯-১০)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান তাপ ও তাপমাত্রা | - | NCTB BOOK
82
82

তোমরা কী কখনো খেয়াল করেছো, গরম তরকারির বাটিতে স্টিলের চামচ রাখা থাকলে তা গরম হয়ে যায়? তরকারি থেকে তাপ কীভাবে তোমার হাত পর্যন্ত এলো? তাপ বেশি তাপমাত্রার স্থান থেকে কম তাপমাত্রার স্থানে যেতে পারে। তাপের এই স্থান পরিবর্তনকে তাপ সঞ্চালন বলে। তাপ সঞ্চালন তিন ভাবে হয়-পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণ।

তাপ পরিবহন: গরম তরকারির বাটি থেকে চামচের মাধ্যমে তাপ পরিবহন পদ্ধতিতে সঞ্চালিত হয়। এ পদ্ধতিতে কঠিন পদার্থে তাপ সঞ্চালিত হয়। তোমরা জানো, কঠিন পদার্থের কণাগুলো নিজেরা স্থান পরিবর্তন করতে পারে না। তারা কেবল নিজেদের স্থানে থেকে কাঁপতে পারে। একটি কঠিন পদার্থের গরম অংশের দ্রুত কম্পমান কণাগুলো পাশের ঠান্ডা অংশের কণাগুলোকে কাঁপিয়ে তুলে ফলে, ঠান্ডা অংশ গরম হয়ে যায়। পাশের ঠান্ডা কণাটি গরম হয়ে তার পাশের ঠান্ডা কণাকে তাপ দেয়। এভাবে কণাগুলো নিজেরা স্থান পরিবর্তন না করে তাপকে গরম প্রান্ত থেকে ঠান্ডা প্রান্তে নিয়ে যায়।

কঠিন পদার্থের মধ্যে ধাতব পদার্থগুলো যেমন লোহা, তামা, পিতল, অ্যালুমিনিয়াম, দস্তা এগুলো দ্রুত তাপ পরিবহন করে। তাই রান্নার জন্য ধাতুর তৈরি হাঁড়ি ব্যবহার করা হয়। অধাতু, যেমন কাঠ, সুতি কাপড়, মাটি এসব তাপ পরিবহন করে খুবই কম। তাই গরম হাড়ি ধরার জন্য আমরা কাপড়ের টুকরা ব্যবহার করি। একই কারণে রান্নার জন্য কাঠের নাড়ানি ব্যবহার সুবিধাজনক।

তাপ পরিচলন: তরল ও বায়বীয় পদার্থে এ প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হয়। একটি পাত্রে পানি নিয়ে চুলার উপরে বসিয়ে তাপ দিলে পুরো পাত্রের পানিই গরম হতে থাকে। এক্ষেত্রে পানির কণাগুলো তাপ গ্রহণ করে শক্তি অর্জন করে। শক্তি অর্জন করে গরম পানিকণা উপরে উঠে যায়। উপরের ঠান্ডা পানির কণাগুলো নিচে নেমে এসে তাপ গ্রহণ করে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সকল কণা তাপ গ্রহণ করে উত্তপ্ত হয়, তাপ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালিত হয়। এভাবে কণাদের স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে তাপ সঞ্চালনের প্রক্রিয়ার নাম পরিচলন। তরল পদার্থের কণার মতো বায়বীয় পদার্থের কণারাও উত্তপ্ত হয়ে সহজেই স্থান পরিবর্তনের মাধ্যমে তাপ সঞ্চালন করে। তোমরা কি কখনো শীতে আগুনের পাশে দাঁড়িয়েছ? শীতের সময়ে গ্রামে মানুষ কাঠ বা ডালপালা জ্বেলে আগুন পোহায়। আগুনের পাশে দাঁড়ালে আমাদের কিছুটা গরম লাগে। কিন্তু তুমি যদি তোমার হাতটা সাবধানে আগুনের ঠিক উপরে নাও, তাহলে দেখবে বেশি তাপ লাগছে। কারণ পরিচলন পদ্ধতিতে বায়ুর কণা উত্তপ্ত হয়ে উপরের দিকে উঠে, পাশে আসে না। তাই আগুনের পাশের থেকে উপরে তাপ বেশি অনুভূত হয়।

তাপ বিকিরণ: আমাদের পৃথিবীতে সূর্যই তাপের মূল উৎস। সূর্য আর পৃথিবীর মাঝখানে প্রায় সবটুকুই ফাঁকা। কোনো বায়বীয় পদার্থও নেই। তাহলে সূর্য থেকে তাপ কীভাবে আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়? সূর্য থেকে তাপ আসে বিকিরণের মাধ্যমে। যেখানে কোনো জড় মাধ্যম নেই, সেখানে তাপ বিকিরণের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়। তোমরা উপরের শ্রেণিতে জানবে যে আলো এক রকমের তরঙ্গ, যা কোনো মাধ্যম ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে। বিকিরণের সময় তাপ আলো বা বিদ্যুৎচুম্বকীয় তরঙ্গাকারে সঞ্চালিত হয়। আসলে মাধ্যম থাকুক বা না থাকুক, উত্তপ্ত বস্তু বিকিরণ পদ্ধতিতে তাপ নির্গত করে।

কোনো পদার্থ তাপ বিকিরণ করলে তাকে বিকিরক বলে। আবার কোনো পদার্থ তাপ শোষণ করলে তাকে বলে শোষক। কোনো পদার্থ তার তাপমাত্রার জন্য তাপ বিকিরণ বা শোষণ করলে তাকে তাপীয় বিকিরণ (Thermal radiation) বা তাপীয় শোষণ বলে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, কোনো পদার্থ ভালো তাপ বিকিরক হলে সেটি ভালো তাপ শোষকও হয়। তা না হলে একটি বিকিরক ক্রমাগত বেশি পরিমাণ তাপ বিকিরণ কার ক্রমশ শীতল হতে থাকবে এবং একটি শোষক ক্রমাগত বেশি পরিমাণ তাপ শোষণ করে ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকবে।

সূর্যের মধ্যে হাইড্রোজেন গ্যাস হিলিয়াম গ্যাসে পরিণত হয়ে তাপ ও আলো উৎপন্ন করে। এই তাপ ও আলো, তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গের মাধ্যেমে মহাশূন্যের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীতে আসে এবং পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য তাপমাত্রায় উত্তপ্ত রাখে। দিনের বেলায় পৃথিবীর কোনো অংশে যে পরিমাণ তাপ শোষণ করে তার থেকে কম তাপশক্তি বিকিরণ করে। ফলে দিনে পৃথিবীর কোনো অংশ উত্তপ্ত হয়ে যায়। রাতের বেলায় পৃথিবীর ঐ অংশ বেশি পরিমাণ তাপ শক্তি বিকিরণ করে শীতল হয়। বায়ুমণ্ডলের কিছু গ্যাস, যেমন কার্বন-ডাইঅক্সাইড, জলীয়বাষ্প, মিথেন, ইত্যাদি তাপ বিকিরণে বাধা প্রদান করে বলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আস্তে আস্তে উত্তপ্ত হচ্ছে। একে বলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং।

এ অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম

  • তাপ হলো এক ধরনের শক্তি যার কারণে কোনো কিছু ঠান্ডা বা গরম হয়। অন্যদিকে, তাপমাত্রা প্রকাশ করে কতটুকু গরম বা ঠান্ডা লাগছে।
  • সাধারণ কাজে তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য পারদ থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়। তাপমাত্রার দুটি স্কেল বেশি প্রচলিত সেলসিয়াস স্কেল ও ফারেনহাইট স্কেল।
  • তাপ প্রয়োগে পদার্থ সাধারণত প্রসারিত হয়। কঠিন ও তরল পদার্থ কম পরিমাণে প্রসারিত হয়, কিন্তু বায়বীয় পদার্থ তাপে বেশি প্রসারিত হয়।
  • তাপমাত্রার পরিবর্তনে বায়ুর চাপ ও আর্দ্রতার পরিবর্তন হয়, যা আবহাওয়ার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে।
  • তাপ তিন প্রক্রিয়ায় সঞ্চালিত হয়-পরিবহন, পরিচলন ও বিকিরণের মাধ্যমে।
common.content_added_and_updated_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion