জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদ (13.5.1)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) জীবের পরিবেশ | - | NCTB BOOK
217
217

জীববৈচিত্র্যকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, প্রজাতিগত বৈচিত্র্য (Species diversity), বংশগতীয় বৈচিত্র্য (Genetical diversity) এবং বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য (Ecosystem diversity)।
প্রজাতিগত বৈচিত্র্য: প্রজাতিগত বৈচিত্র্য বলতে সাধারণত পৃথিবীতে বিরাজমান জীবগুলোর মোট প্রজাতির সংখ্যাকেই বুঝায়। পৃথকযোগ্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি ভিন্নতর হয়। যেমন, বাঘের সাথে হরিণের আকার, স্বভাব, হিংস্রতা, সংখ্যা বৃদ্ধির ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। এক প্রজাতির সাথে অন্য প্রজাতির বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নতাই প্রজাতিগত বৈচিত্র্য।
বংশগতীয় বৈচিত্র্য: একই প্রজাতিভুক্ত সদস্যগণের মধ্যেও অনেক বিষয়ে পার্থক্য দেখা যায়। যেমন
একই প্রজাতি কিন্তু তাদের গড়ন, আকার, রোগ-প্রতিরোধ এবং পরিবেশ প্রতিকূলতা সহ্য করার ক্ষমতা ভিন্ন। এই পার্থক্যগুলো তৈরি হয় তাদের জিন সংগঠনের সামান্য বৈচিত্র্যের কারণে। কারণ জিনের মাধ্যমেই জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে সঞ্চারিত হয়। প্রত্যেক বৈশিষ্ট্যের জন্য নির্দিষ্ট জিন থাকে। বিভিন্ন কারণে এই জিনের গঠন এবং বিন্যাসের পরিবর্তন হয়ে জীবের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয় এবং নতুন প্রজাতির উদ্ভব হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় জীবের মধ্যে যে বৈচিত্র্য ঘটে, তাকেই বলা হয় বংশগতীয় বৈচিত্র্য।
বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য: একটি বাস্তুতন্ত্রের ভৌত উপাদান, রাসায়নিক উপাদান এবং জৈবিক উপাদানগুলোর মধ্যে কোনো প্রকার পরিবর্তন দেখা দিলে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটে। এসব পরিবর্তন অবশ্যই ধীর এবং ধারাবাহিক। এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য সেখানে বসবাসরত জীবের মধ্যেও পরিবর্তন সাধিত হয়। ফলে যে জীববৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়, তাকেই বলা হয় বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য। একটি ছোট পুকুরের বাস্তুতন্ত্রে যেসব উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বসতি গড়ে উঠে তা নদীর বাস্তুতন্ত্র থেকে ভিন্নতর। বন, তৃণভূমি, হ্রদ, নদী, জলাভূমি, পাহাড়, সাগর, মরুভূমি প্রভৃতি বাস্তুতন্ত্রে গড়ে উঠে নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ এক একটি জীব সম্প্রদায়।


বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের প্রভাব
পরিবেশের উপাদানগুলো পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পর্কযুক্ত। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যই এই জটিল সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিপুলসংখ্যক জীবের তৎপরতার মধ্য দিয়ে পরিবেশে এই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিবেশের কেবল একটি বিশেষ প্রজাতির বিলুপ্তি বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সে কারণে পরিবেশ স্থিতিশীল রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশের যেসব জীব বা প্রাণীকে এক সময় অপ্রয়োজনীয় এবং অবাঞ্ছিত মনে করা হতো, সময়ের বিবর্তনে দেখা গেছে সেগুলোই পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের চেসাপিক উপকূলে ছিল অসংখ্য ঝিনুক। সেগুলো মাত্র তিন দিনে গোটা এলাকার পানি পরিশুদ্ধ করতে পারত। কিন্তু এখন সেই ঝিনুকের শতকরা 99 ভাগ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে অবশিষ্ট ঝিনুকেরা এখন এক বছরেও ঐ পানি আর

চিত্র 13.07: শকুন, চিল এবং কাক নিয়মিতভাবে প্রকৃতির জঞ্জাল পরিষ্কার করে।

পরিশুদ্ধ করতে পারে না। এ কারণে ঐ উপকূলের পানি ক্রমশই কর্দমাক্ত হচ্ছে এবং পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। একটি পূর্ণবয়স্ক ব্যাঙ একদিনে তার ওজনের সমপরিমাণ পোকা-মাকড় খেয়ে ফেলতে পারে। এই পোকা-মাকড় আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। কিন্তু নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ব্যাঙ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাখিদের প্রধান খাদ্য হচ্ছে কীটপতঙ্গ। এর মধ্যে মানুষ এবং ফসলে জন্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গই বেশি। তাছাড়া পরাগায়নের ক্ষেত্রেও পাখির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পেঁচা, ঈগল, চিল এবং বাজপাখিকে আমরা শিকারি প্রজাতি বলে জানি। এরা ইঁদুর খেয়ে ইঁদুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। মানুষের বসতবাড়িতে বসবাসকারী একজোড়া ইঁদুর বিনা বাধায় বংশ বিস্তার করলে বছর শেষে ইঁদুরের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৪০ টিতে। কিন্তু একটি পেঁচা দিনে কমপক্ষে তিনটি ইঁদুর খেয়ে হজম করতে পারে। শকুন, চিল এবং কাক প্রকৃতির জঞ্জাল সাফ না করলে রোগ জীবাণুতে পৃথিবী সয়লাব হয়ে যেত।সে কারণে কোনো জীবকেই অপ্রয়োজনীয় বলা যায় না। পরিবেশ থেকে কোনো প্রজাতি বিলুপ্ত হলে বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা নন্ট হয়ে যায়। কাজেই বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion