জিএমও (GMO) বা রিকম্বিনেন্ট DNA প্রস্তুত করার ধাপসমূহ (14.3.1)

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - জীববিজ্ঞান (নতুন সংস্করণ) জীবপ্রযুক্তি | - | NCTB BOOK
261
261

মানুষের অন্ত্রে বসবাস করে একধরনের ব্যাকটেরিয়া, যার নাম Escherichia coli। এই ব্যাকটেরিয়ার উপর গবেষণা করে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধিকাংশ কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্রযুক্তি নিচে উল্লেখ করা ধাপগুলো (চিত্র 14.02) অবলম্বন করে সম্পন্ন করা হয়:
(a) প্রথমে দাতা জীব থেকে কাঙ্ক্ষিত জিনসহ ডিএনএ অণুকে পৃথক করা হয়। এরপর এই জিনের বাহক বা ক্যারিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিড ডিএনএ পৃথক করা হয়। প্লাজমিড হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া কোষের ক্রোমোজোমের বাইরে আরেকটি স্বতন্ত্র ডিএনএ অণু, যেটি বিভাজিত হতে পারে বা স্ববিভাজনে সক্ষম।
(b) এ ধাপে প্লাজমিড ডিএনএ এবং দাতা ডিএনএকে এক বিশেষ ধরনের এনজাইম বা উৎসেচক দিয়ে খণ্ডিত করা হয়। দাতা ডিএনএ এর এসব খণ্ডের কোনো একটিতে কাঙ্ক্ষিত জিনটি থাকে।
(c) এ ধাপে লাইগেজ নামক একধরনের এনজাইম দিয়ে দাতা ডিএনএকে প্লাজমিড ডিএনএ-এর কাটা প্রান্ত দুটোর মাঝখানে স্থাপন করা হয়। লাইগেজ এখানে আঠার মতো কাজ করে। এর ফলে নির্দিষ্ট জিনসহ রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ প্লাজমিড তৈরি হয়। এই রিকম্বিন্টেন্ট প্লাজমিড এখন দাতা ডিএনএর খণ্ডিত অংশ বহন করে।
(d) এখন এই রিকম্বিনেন্ট প্লাজমিডকে ব্যাকটেরিয়ার ভিতরে প্রবেশ করানো হয়। খণ্ডিত ডিএনএ গ্রাহক কোষে প্রবেশ করনোর পদ্ধতিকে ট্রান্সফরমেশন বলে। ট্রান্সফরমেশনের ফলে নতুন জিন নিয়ে যে ব্যাকটেরিয়া বা জীবের উদ্ভব ঘটে, তাকে ট্রান্সজেনিক জীব বলে।
(e) এবার নির্দিষ্ট জিন বহনকারী রিকম্বিনেন্ট প্লাজমিড ধারণ করা ব্যাকটেরিয়াকে শনাক্ত করে আলাদা করা হয়। এরপর নির্দিষ্ট জিন বহনকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোর ব্যাপক বংশবৃদ্ধি ঘটানো হয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর প্রত্যেকটিতে এখন কাঙ্ক্ষিত জিন রয়েছে। এই পদ্ধতিতে জিন তৈরি করাকে বলা হয় জিন ক্লোনিং। জিনকে ব্যবহার করার জন্য প্লাজমিডকে আবার আলাদা করে নেওয়া হয়।
আধুনিক জীবপ্রযুক্তি বা জিন কৌশলের মাধ্যমে জিন স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য অল্প সময়ে সুচারুভাবে স্থানান্তর করা সম্ভব হয় বলে সংশ্লিষ্ট উদ্ভাবক বা উদ্যোক্তাগণের নিকট প্রচলিত প্রজননের তুলনায় এ প্রযুক্তিটি অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে।

নতুন ফসল উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে প্রচলিত প্রজননের তুলনায় জিন প্রকৌশল অনেক বেশি কার্যকরী, কারণ প্রচলিত প্রজনন প্রক্রিয়ায় জিন স্থানান্তর একই অথবা খুব নিকটবর্তী প্রজাতির মাঝে সীমাবদ্ধ, কিন্তু জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে নিকটবর্তী বা দূরবর্তী যেকোনো প্রজাতির মাঝে এক বা একাধিক জিন সরাসরি স্থানান্তর করা সম্ভব। প্রচলিত প্রজননে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। জিন প্রকৌশলের সাহায্যে খুব দ্রুত কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ, প্রাণী বা অণুজীব পাওয়া সম্ভব। প্রচলিত প্রজননে কাঙ্ক্ষিত জিনের সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত জিনও স্থানান্তর হয়ে যেতে পারে এবং কাঙ্ক্ষিত জিনের স্থানান্তরও অনেক খানি অনিশ্চিত। জিন প্রকৌশলে অনাকাঙ্ক্ষিত জিন স্থানান্তরের সম্ভাবনা নেই এবং কাঙ্ক্ষিত জিন স্থানান্তরের সম্ভাবনা অনেক বেশি। প্রচলিত প্রজনন কোনো রকম জীবনিরাপত্তা (Biosafety) নিয়ম পদ্ধতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত নয় কিন্তু জিন প্রকৌশলের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জীবনিরাপত্তা নিয়ম-নীতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। প্রচলিত প্রজননে বিষাক্ততা (Toxicity) পরীক্ষা করা হয় না, কিন্তু জিন প্রকৌশলে বিষাক্ততা (Toxicity) পরীক্ষা করা হয়।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion