মাইক্রো কম্পিউটার (Micro Computer)

- তথ্য প্রযুক্তি কম্পিউটার (Computer) | - | NCTB BOOK
1.4k
1.4k

মাইক্রো কম্পিউটার হলো একটি ছোট, কম্প্যাক্ট এবং পার্সোনাল কম্পিউটার যা একক মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহার করে কাজ করে। এটি সাধারণত ব্যক্তি বা ছোট ব্যবসার জন্য তৈরি করা হয় এবং এর আকার, খরচ, এবং ব্যবহারিকতার জন্য এটি জনপ্রিয়। মাইক্রো কম্পিউটার হলো বর্তমান সময়ের পার্সোনাল কম্পিউটার (PC), ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এবং অন্যান্য ছোট কম্পিউটিং ডিভাইসের মূল ধারণা।

মাইক্রো কম্পিউটারের ইতিহাস:

  • মাইক্রো কম্পিউটারের বিকাশ শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে, যখন মাইক্রোপ্রসেসরের উদ্ভাবন ঘটে।
  • ১৯৭১ সালে ইন্টেল ৪০০৪ (Intel 4004) প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করে, যা একটি ছোট চিপে প্রসেসিং ক্ষমতা সরবরাহ করে এবং কম্পিউটার প্রযুক্তিকে আরও ছোট এবং সাশ্রয়ী করে তোলে।
  • ১৯৭৫ সালে "অল্টায়ার ৮৮০০" (Altair 8800) প্রথম মাইক্রো কম্পিউটার হিসেবে বাজারে আসে। এটি একটি কিট ফর্মে বিক্রি করা হয়, যা ব্যবহারকারীরা নিজেরা সংযোজন করত।

মাইক্রো কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

১. মাইক্রোপ্রসেসর:

  • মাইক্রো কম্পিউটারের মূল উপাদান হলো মাইক্রোপ্রসেসর। এটি সিপিইউ হিসেবে কাজ করে এবং কম্পিউটারের সমস্ত গাণিতিক এবং যৌক্তিক কাজ সম্পাদন করে।
  • উদাহরণস্বরূপ, Intel, AMD, এবং ARM এর প্রসেসরগুলি মাইক্রো কম্পিউটারের জন্য জনপ্রিয়।

২. ইনপুট এবং আউটপুট ডিভাইস:

  • মাইক্রো কম্পিউটারগুলোতে বিভিন্ন ইনপুট ডিভাইস থাকে, যেমন কীবোর্ড, মাউস, এবং টাচস্ক্রিন, এবং আউটপুট ডিভাইস যেমন মনিটর এবং প্রিন্টার।
  • এ ধরনের ডিভাইসের সাহায্যে ব্যবহারকারীরা সহজেই কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবহার করতে পারে।

৩. মেমোরি এবং স্টোরেজ:

  • মাইক্রো কম্পিউটারগুলিতে র‍্যাম (RAM) থাকে, যা অস্থায়ী তথ্য সংরক্ষণ করে এবং কম্পিউটারের গতিকে বাড়িয়ে দেয়।
  • স্থায়ী তথ্য সংরক্ষণের জন্য হার্ড ড্রাইভ (HDD), সলিড-স্টেট ড্রাইভ (SSD), এবং অন্যান্য স্টোরেজ ডিভাইস ব্যবহৃত হয়।

৪. অপারেটিং সিস্টেম:

  • মাইক্রো কম্পিউটারগুলোতে অপারেটিং সিস্টেম (OS) থাকে, যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
  • উইন্ডোজ (Windows), ম্যাকওএস (macOS), লিনাক্স (Linux), এবং অ্যান্ড্রয়েড (Android) এর মতো অপারেটিং সিস্টেম মাইক্রো কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়।

মাইক্রো কম্পিউটারের প্রকারভেদ:

১. পার্সোনাল কম্পিউটার (PC):

  • ডেস্কটপ পিসি হলো সাধারণ মাইক্রো কম্পিউটার, যা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তৈরি। এটি সাধারণত একটি ডেস্কে স্থাপন করা হয় এবং বিভিন্ন ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকে।
  • পিসিগুলি অফিসিয়াল কাজ, শিক্ষাগত কার্যক্রম, বিনোদন, এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।

২. ল্যাপটপ এবং নোটবুক:

  • ল্যাপটপ হলো একটি পোর্টেবল মাইক্রো কম্পিউটার, যা সহজে বহনযোগ্য এবং ডেস্কটপের সমস্ত ক্ষমতা বহন করতে সক্ষম।
  • নোটবুক এবং আল্ট্রাবুক হলো ল্যাপটপের উন্নত সংস্করণ, যা আরও পাতলা, হালকা, এবং শক্তিশালী।

৩. ট্যাবলেট কম্পিউটার:

  • ট্যাবলেট কম্পিউটারগুলো ছোট এবং পোর্টেবল, এবং এতে টাচস্ক্রিন থাকে যা ব্যবহারকারীদের সরাসরি স্ক্রিনের উপর স্পর্শ করে কাজ করার সুযোগ দেয়।
  • ট্যাবলেটগুলোতে সাধারণত Android বা iOS অপারেটিং সিস্টেম থাকে এবং এগুলি ল্যাপটপের চেয়ে হালকা কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।

৪. স্মার্টফোন:

  • স্মার্টফোনও মাইক্রো কম্পিউটারের একটি রূপ, যা টেলিফোন কার্যক্রমের পাশাপাশি মাইক্রোপ্রসেসর এবং টাচস্ক্রিনের মাধ্যমে ছোট মাপের কম্পিউটিং কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম।
  • স্মার্টফোনে অ্যান্ড্রয়েড বা iOS-এর মতো অপারেটিং সিস্টেম থাকে এবং বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন চালাতে সক্ষম।

মাইক্রো কম্পিউটারের ব্যবহার:

১. ব্যবসায়িক কাজ: মাইক্রো কম্পিউটার অফিসের কাজ, হিসাব-নিকাশ, ডকুমেন্ট তৈরি, এবং ডেটা বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। ২. শিক্ষা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, গবেষণা, এবং প্রেজেন্টেশনের জন্য মাইক্রো কম্পিউটার ব্যবহার করে। ৩. বিনোদন: গেম খেলা, মুভি দেখা, মিউজিক শোনা, এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য মাইক্রো কম্পিউটার একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস। ৪. ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং যোগাযোগ: ইন্টারনেটে তথ্য অনুসন্ধান, ইমেইল, এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্যও মাইক্রো কম্পিউটার অত্যন্ত কার্যকর।

মাইক্রো কম্পিউটারের প্রভাব এবং গুরুত্ব:

  • সহজলভ্যতা: মাইক্রো কম্পিউটার ছোট, কম দামের এবং সহজলভ্য, যা ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক।
  • বহুমুখিতা: মাইক্রো কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরণের সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করে বিভিন্ন কাজ করা যায়, যা এটি অত্যন্ত বহুমুখী করে তোলে।
  • ইন্টারনেট এক্সেস: মাইক্রো কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সহজে পাওয়া যায়, যা যোগাযোগ এবং তথ্য অনুসন্ধানে সাহায্য করে।
  • শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ: মাইক্রো কম্পিউটার শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণ সরঞ্জাম, যা অনলাইন কোর্স এবং ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের সুযোগ দেয়।

মাইক্রো কম্পিউটারের ভবিষ্যৎ:

মাইক্রো কম্পিউটারের প্রযুক্তি ক্রমাগত উন্নয়নশীল। উন্নত প্রসেসর, দ্রুততর মেমোরি, এবং শক্তিশালী গ্রাফিক্সের মাধ্যমে মাইক্রো কম্পিউটারগুলির ক্ষমতা আরও বাড়ছে। এছাড়াও, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR), এবং ক্লাউড কম্পিউটিং প্রযুক্তির সংযোজন মাইক্রো কম্পিউটারের ভবিষ্যৎ আরও উন্নত এবং কার্যকর করে তুলবে।

common.content_updated_by

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

পিসি
মাইক্রো কম্পিউটার
মেইনফ্রেম কম্পিউটার
আই বি এম
কোনটিই নয়
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion