আমরা জানি কম্পনশীল বস্তু শব্দ সৃষ্টিকরে। শ্রোতার নিকট এ শব্দ কী করে পৌঁছায়? একটি উদাহরণ বিবেচনা করা যাক। কোনো বাদ্যযন্ত্রের কম্পনশীল তার বা কোনো সুরশলাকার কম্পনশীল বাহু এদের চারপাশের বায়ুর অণুগুলোকে কম্পিত করে। বায়ুর এই কম্পিত অণুগুলো এদের কম্পনকে পার্শ্ববর্তী বায়ুর অণুগুলোতে স্থানান্তর করে দেয়। পর্যায়ক্রমে এভাবেই শব্দ কোনো মাধ্যমে ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে উৎস থেকে শ্রোতার নিকট পৌঁছায়। কোনো মাধ্যমের কণাগুলোর কম্পনের ফলে সৃষ্ট যে আন্দোলন, মাধ্যমের মধ্য দিয়ে চলে বা সঞ্চালিত হয়, তাকে ঢেউ বলে। একটি লম্বা স্প্রিং নিয়ে এর এক প্রান্তে আঘাত করলে দেখবে স্প্রিংটির সংকোচন ও প্রসারণের ফলে আন্দোলন সঞ্চালিত হচ্ছে। শব্দের ঢেউ ঠিক এভাবেই সঞ্চালিত হয়। শব্দের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতকে শব্দ সঞ্চালন বলে।
শব্দ সঞ্চালনের জন্য মাধ্যম প্রয়োজন। এই মাধ্যম হতে পারে কঠিন, তরল ও বায়বীয়। শব্দ সবচেয়ে দ্রুত চলে কঠিন মাধ্যমে, তারপর তরল মাধ্যমে, এরপর বায়ু মাধ্যমে। পরবর্তীতে কাজের মাধ্যমে আমরা তা প্রমাণ করব। শব্দ কি মাধ্যম ছাড়া চলতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমরা একটি কাজ করব।
কাজ: মাধ্যম ছাড়া শব্দ সঞ্চালিত হয় না তা জানা। প্রয়োজনীয় উপকরণ: একটি ধাতব ঝুনঝুনি, একটি সরু কাঠি. একটি বড়ো মুখওয়ালা বোতল ও একটি কর্ক। পদ্ধতি: কাঠির এক মাথায় ঝুনঝুনিটাকে সুতো দিয়ে বাঁধো। কাঠির অপর মাথাটি কর্কের ভিতরের মুখে ঢুকাও। এবার পুরো ব্যবস্থাটিকে বোতলের ভিতর এমনভাবে ঢুকাও কর্কটি যেন ছিপির কাজ করে। ভালো করে ছিপিটি বন্ধ কর এবং বোতলটি ঝাঁকাও। খেয়াল রাখবে ঝুনঝুনি যেন বোতলের দেয়াল স্পর্শ না করে। বাইরে থেকে ঝুনঝুনির শব্দ শুনতে পাবে। এবার কর্কটি খুলে একটু উঁচু করে রেখে বোতলের নিচে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি দিয়ে তাপ দাও। গরম করার জন্য বোতল থেকে অনেকখানি বাতাস বেরিয়ে যাবে। বোতলের ছিপিটি বন্ধ কর। বোতলটি ঠান্ডা হওয়ার পর আবার ঝাঁকাও। কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছ কি? খুব ক্ষীণ শব্দ শোনা যাচ্ছে। যদি বোতলের সব বাতাস বের হয়ে যেতো তাহলে কোনো শব্দই শুনতে পেতে না। এর অর্থ কী? এর অর্থ শব্দ মাধ্যম ছাড়া সঞ্চালিত হয় না। |
common.read_more