স্বার্থহীন ভালোবাসার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সহোদরের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের শ্রদ্ধা-ভালোবাসাই হলো ভ্রাতৃপ্রেম। আমরা ভ্রাতৃপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাই বাল্মীকি রচিত রামায়ণে রাম ও লক্ষ্মণের মধ্যে। অযোধ্যার রাজা দশরথের ছিল তিন রানি। বড় রানি কৌশল্যার পুত্র রামচন্দ্র। মেজ রানি কৈকেয়ীর পুত্র ভরত। এবং ছোট রানি সুমিত্রার দুই পুত্র লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন। ছোটবেলা থেকেই রাম ও লক্ষ্মণের মধ্যে ছিল খুব ভাব। রাম-লক্ষ্মণ দুটি ভাই যেন এক প্রাণ, এক আত্মা। এদের একে অপরের জন্য ছিল গভীর স্নেহ ও ভালোবাসা। পিতৃসত্য রক্ষার জন্য রামকে চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যেতে হয়। তখন তাঁর বনবাসের সঙ্গী হন স্ত্রী সীতা। ভাই লক্ষ্মণ তখন তাঁর স্ত্রীকে ছেড়ে দাদার সাথে বনবাসে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। দাদা রামের শত আপত্তি সত্ত্বেও লক্ষ্মণ রাজ্যসুখ পরিত্যাগ করে দাদার প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিঃসংকোচে নিজের জীবনের চৌদ্দটি বছর ভাইয়ের সেবার জন্য উৎসর্গ করেন। তিনি সর্বদা রামের ছায়া সঙ্গী ছিলেন। রামচন্দ্রও তাঁর ভাই লক্ষ্মণকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। বনবাসে থাকা কালে তিনি একাধারে রামের ভাই বন্ধু ও সহায়কের ভূমিকা পালন করেন। তিনি সর্বক্ষণ দাদার পাশে থেকেছেন। তাঁর সেবা করেছেন। । বিপদের কোনো আঁচড় দাদার গায়ে লাগতে দেননি।
লক্ষ্মণ কর্তৃক মেঘনাদ বধ ছিল দাদা রামকে ভালোবাসার একটি বড় উদাহরণ। মেঘনাদ ছিলেন লঙ্কার রাজা রাবণের পুত্র। তিনি ছিলেন মহাপরাক্রমশালী একজন যোদ্ধা। তাঁকে যুদ্ধে পরাজিত করা ছিল একরকম অসম্ভব ব্যাপার। সেই অজেয় মেঘনাদকে লক্ষ্মণ বধ করেন। এতে রামের লঙ্কা জয় সহজ হয়।
লক্ষণের মতো ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এমন দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল। আজও মানুষ ভাইয়ে ভাইয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে রাম লক্ষ্মণের উদাহরণ দেয়।
বাস্তব জীবনে আমরা রামায়ণের এই দুই ভাইয়ের চরিত্র থেকে শিক্ষা নিতে পারি। আমরা আমাদের নিজেদের ভাই বোনের সাথে সহপাঠীদের সাথে প্রতিবেশীদের সাথে সব সময় সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখব । কখনো কারো সাথে ঝগড়া করব না। হিংসা বিদ্বেষ করব না। সকলে মিলে মিশে একত্রে বসবাস করব। সকলে সকলের সুখ দুঃখ ভাগ করে নিব। তাহলেই আমাদের জীবন হয়ে উঠবে অনেক সুশৃঙ্খল, সুন্দর ও আনন্দময়।
common.read_more