বাংলাদেশের সঙ্গে জাপান, কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার সম্পর্ক (পাঠ ২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এশিয়ার কয়েকটি দেশ | - | NCTB BOOK
77
77

জাপান

জাপান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপময় দেশ। ছোটো-বড়ো প্রায় চার হাজার দ্বীপ নিয়ে এ রাষ্ট্রটি গঠিত। এর মধ্যে প্রধান চারটি দ্বীপ হলো হোক্কাইডো, হনসু, শিকোকু এবং কিউশু। দেশটির চারদিকেই সমুদ্র। জাপান সাগর এবং পূর্বচীন সাগর জাপানকে এশিয়া মহাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।

দেশটির রাষ্ট্রীয় নাম কিংডম অব জাপান ও স্থানীয় নাম নিহন বা নিপ্পন। এর রাজধানী টোকিও। এশিয়া মহাদেশের একেবারে পূর্ব প্রান্তে এ দেশটি অবস্থিত। জাপানকে তাই 'সূর্যোদয়ের দেশ'ও বলা হয়। দেশটির আয়তন ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭০৮ বর্গকিলোমিটার, লোক সংখ্যা ১২ কোটি ৬৫ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫৩৬জন। জাপানের শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ জাপানি ভাষায় কথা বলে। এ দেশের শিক্ষার হার একশত ভাগ এবং মাথাপিছু আয় ৩৭ হাজার ৬শ মার্কিন ডলার। সিন্টো জাপানিদের জাতিগত ধর্ম।

জাপানের জলবায়ু নাতিশীতষ্ণ মণ্ডলীয়। এখানকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাব স্পষ্ট। গ্রীষ্মকালে দেশটির আবহাওয়া আর্দ্র এবং শীতের তীব্রতাও কম। কৃষিপণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ধান, গম, বার্লি, সয়াবিন, মিষ্টি আলু, আখ, বিট, আপেল ও আঙুর। জাপানের প্রধান শিল্প হচ্ছে লোহা ও ইস্পাত, ইলেকট্রোনিক সামগ্রী, জাহাজ ও গাড়ি নির্মাণ, বস্ত্র, কলকবজা, ঔষধ, বৈদ্যুতিক সামগ্রী এবং বিভিন্ন প্রকার ভারী যন্ত্রপাতি। শিল্পে জাপান বিশ্বের শীর্ষস্থানে রয়েছে। দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিই হলো শিল্প। দেশটিতে প্রচুর খনিজ সম্পদও রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, লোহা, ম্যাংগানিজ, পেট্রোলিয়াম, সীসা, সোনা, রূপা প্রভৃতি। জাপানে ৬ থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের শিক্ষা বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশের সাথে জাপানের সম্পর্ক বরাবরই অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। জাপান বাংলাদেশের রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণ ও শিল্প-উন্নয়নে প্রধান সহযোগী। এ দেশের সাথে জাপানের বাণিজ্যিক সম্পর্কও রয়েছে।

কোরিয়া

এশিয়া মহাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণে কোরিয়ান উপদ্বীপের অবস্থান। এটি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত। উত্তর হতে দক্ষিণাঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ১ হাজার কিলোমিটার। উত্তর দিকের সীমান্তের অধিকাংশই চীনের সাথে এবং কিছু অংশ রাশিয়ার সাথে সংযুক্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কোরিয়া দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এর একটি দক্ষিণ কোরিয়া এবং অপরটি উত্তর কোরিয়া। প্রথমটির সরকারি নাম কোরিয়া প্রজাতন্ত্র ও দ্বিতীয়টির নাম গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া। দুটি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও ভিন্ন। কোরিয়ার অধিকাংশ অঞ্চলই পর্বতময়। এর পূর্বে জাপান সাগর। পশ্চিম ও দক্ষিণের অনেকটাই সমতলভূমি। দুই অংশ মিলে কোরিয়ার দ্বীপের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার।

কোরিয়ায় চার ধরনের ঋতু বিদ্যমান। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম আবহাওয়ার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শীতকালীন আবহাওয়া বিরাজ করে। কোরিয়ার কৃষি পণ্যের মধ্যে ধান, বার্লি, বাঁধাকপি, আপেল, আঙুর, তামাক প্রভৃতি এবং শিল্প পণ্যের মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক পণ্য, যন্ত্রপাতি, জাহাজ ও মোটরগাড়ি,, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী প্রভৃতি। খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে লোহা, চুনাপাথর, গ্রানাইট, সিসা, রূপা, দস্তা প্রভৃতি।

কোরিয়ানরা জাতিগতভাবে একটি ভাষাগোষ্ঠীর। ভাষাগত ও নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে কোরিয়ানরা চীন ও জাপানিদের থেকে আলাদা। যদিও শারীরিক গঠনের দিক দিয়ে চীন ও জাপানের মানুষের সাথে তাদের মিল রয়েছে। কোরিয়ানরা সবাই একই কোরিয়ান ভাষায় কথা বলে ও লেখে।

বাংলাদেশের সাথে কোরিয়ার বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ নির্মাণ ও শিল্প-উন্নয়নে যথেষ্ট সহযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্কও রয়েছে।

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। মালয়েশিয়া ১৫টি প্রদেশ নিয়ে গঠিত। দেশটির ভূপ্রকৃতি বৈচিত্র্যপূর্ণ। এর পশ্চিমাংশে জলাভূমি, পূর্বাংশে বালিময় এলাকা এবং মধ্যভাগের পর্বতশ্রেণি উত্তর ও দক্ষিণে বিস্তৃত।

মালয়েশিয়ায় ইসলাম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দু প্রভৃতি ধর্মের লোক বাস করে। এর রাজধানীর নাম কুয়ালালামপুর। এছাড়া জর্জ টাউন, জহর বাহরু, পেনাং, ইপো ও কুচিং অন্যতম প্রধান শহর।

মালয়েশিয়া একটি কৃষিপ্রধান দেশ। মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি কৃষির উপর নির্ভরশীল। প্রধান শিল্পপণ্যের মধ্যে রয়েছে রাবার, সার, চীনামাটির দ্রব্য প্রভৃতি। খনিজসম্পদের মধ্যে টিন, লোহা এবং পেট্রোল উল্লেখযোগ্য। যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হলো রেলপথ, সড়কপথ ও বিমানপথ। জর্জটাউন, ক্ল্যাঙ্গ, কুচিং এবং পেনাং মালয়েশিয়ার প্রধান সমুদ্রবন্দর। স্বাধীনতার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়া নানা ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করেছে। মালয়েশিয়ার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন EPZ-এ মালয়েশিয়া অনেক অর্থ বিনিয়োগ করেছে। বাংলাদেশের অনেক লোক মালয়েশিয়াতে কর্মরত রয়েছে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার একটা বড়ো ক্ষেত্র।

কাজ-১: পাঠ অবলম্বনে জাপান ও কোরিয়ার পরিচয় দাও।
কাজ-২: মালয়েশিয়া মূলত কৃষিপ্রধান না শিল্পপ্রধান দেশ? আমাদের সঙ্গে এ দেশের কী ধরনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে তোমার জানামতে তা আলোচনা কর।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion