প্রত্যয়যোগে শব্দগঠন

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি শব্দগঠন | - | NCTB BOOK
110
110

কৃৎ ও তদ্ধিত দুই ধরনের প্রত্যয়ই শব্দ গঠনে সহায়ক। 'যা পরে যুক্ত হয় তা-ই প্রত্যয়।' সুতরাং যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতু বা প্রাতিপদিকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তা-ই প্রত্যয়

ভাষার সমৃদ্ধি শব্দের ওপর নির্ভরশীল। যে ভাষায় যত বেশি শব্দ আছে, সে ভাষা তত বেশি সমৃদ্ধ। বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের একটি অন্যতম রীতি হচ্ছে প্রত্যয়। কিন্তু প্রত্যয়ের নিজের কোনো স্বাধীন অর্থ নেই।

সংজ্ঞা: যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি ধাতু বা শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে।

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র মতে, ধাতু বা শব্দের উত্তর ভিন্ন ভিন্ন অর্থে যে বর্ণ বা বর্ণসমূহ যুক্ত হইয়া শব্দ প্রস্তুত হয়, তাহাদিগকে প্রত্যয় বলে।

যেমন:

হাত + আ = হাতা; মনু + অ = মানব; চল্ + অন্ত চলন্ত; কৃ + অক = কারক।

এখানে, 'আ', 'অ', 'অন্ত', এবং 'অক'-এগুলো প্রত্যয়। 'হাত', 'মনু' নাম-প্রকৃতি এবং চল্', 'কৃ' ক্রিয়া- প্রকৃতি

প্রত্যয়ের শ্রেণিবিভাগ: প্রত্যয় প্রধানত দুই প্রকার। যথা: ১. কৃৎ প্রত্যয় ও ২. তদ্ধিত প্রত্যয়।

কৃৎ প্রত্যয়: ধাতুর পরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে। যেমন:

√ধর্ + আ = ধরা ডুব্‌ + উরী = ডুবুরী দৃশ্ + য = দৃশ্য ইত্যাদি।

তদ্ধিত প্রত্যয়: শব্দের পরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে। যেমন:
বাঘ + আ = বাঘা সোনা আলি সোনালি সপ্তাহ ইক সাপ্তাহিক ইত্যাদি।

প্রত্যয়ের মাধ্যমে শব্দগঠনের ক্ষেত্রে 'প্রকৃতি' ও 'প্রাতিপদিক' এ দুটি বিষয় সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

প্রকৃতি: শব্দ বা ধাতুর মূলই হচ্ছে প্রকৃতি। অর্থাৎ 'মৌলিক শব্দের যে অংশকে আর কোনোভাবেই বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়, তাকে বলা হয় প্রকৃতি।' অথবা, ভাষায় যার বিশ্লেষণ সম্ভব নয়, এমন মৌলিক শব্দকে প্রকৃতি বলে। শব্দ কিংবা পদ থেকে প্রত্যয় ও বিভক্তি অপসারণ করলে প্রকৃতি অংশ পাওয়া যায়।

প্রকৃতি দুই প্রকার। যথা:

(ক) ক্রিয়া-প্রকৃতি বা ধাতু,
(খ) নাম-প্রকৃতি বা সংজ্ঞা-প্রকৃতি।

(ক) ক্রিয়া-প্রকৃতি: প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দের বিশ্লেষণে মৌলিক ভাব-দ্যোতক যে অংশ পাওয়া যায়, তা যদি অবস্থান, গতি বা অন্য কোনো প্রকারের ক্রিয়া বোঝায়, তাকে ক্রিয়া-প্রকৃতি বলে। যেমন: চল্, √পড়, খরাখ, দৃশ, ঠক্ প্রভৃতি ক্রিয়া-প্রকৃতি। [চলন্ত = চল্ (ক্রিয়া-প্রকৃতি) + অন্ত (প্রত্যয়)]

(খ) নাম-প্রকৃতি: প্রত্যয়-নিষ্পন্ন শব্দের বিশ্লেষণে মৌলিক ভাব-দ্যোতক যে অংশ পাওয়া যায়, তা যদি কোনো দ্রব্য, জাতি, গুণ বা কোনো পদার্থকে বোঝায়, তাকে নাম-প্রকৃতি বলে। যেমন: মা, চাঁদ, গাছ, প্রভৃতি নাম-প্রকৃতি।

হাতল = হাত (নাম-প্রকৃতি) + অল (প্রত্যয়)।

প্রাতিপদিক: বিভক্তিহীন নাম শব্দকে প্রাতিপদিক বলে। যেমন: হাত, বই, কলম, মাছ ইত্যাদি।

প্রত্যয় সম্পর্কে জ্ঞাতব্য

১. ক্রিয়াবাচক শব্দমূলের ক্ষেত্রে ধাতু চিহ্ন () ব্যবহৃত হয়। যেমন: চল্ + অন্ত চলন্ত; পঠ্‌ + অক = পাঠক।

২. 'ধাতু' ও 'প্রত্যয়' উভয়কে একসঙ্গে উচ্চারণ করার সময় ধাতুর অন্ত্যধ্বনি এবং প্রত্যয়ের আদিধ্বনি অনেক ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রভাবে সমতা প্রাপ্তহয়। যেমন কাঁদ্ + না কান্না; রাঁধ + না = রান্না। = উল্লিখিত উদাহরণে ধাতুর অন্ত্যধ্বনি 'দ' ও 'ধৃ' প্রত্যয়ের আদিধ্বনি 'ন'-এর সমতাপ্রাপ্ত হয়েছে।

কৃৎ এবং তদ্ধিত প্রত্যয়ের সংখ্যা অনেক। নিচে প্রয়োজনীয় কিছুসংখ্যক প্রত্যয়ের মাধ্যমে শব্দ গঠনের উদাহরণ প্রদত্ত হলো:

১. অ (অচ্)

√পট্ + অ = পাঠ।
√জি + অ = জয়।

২. অনীয় (অনীয়র্)

√কৃ + অনীয় = করণীয়।
√পা + অনীয় = পানীয়।
√স্মৃ + অনীয় = স্মরণীয়।
√দৃশ্ + অনীয় = দর্শনীয়।

৩. তি (ক্তি)

√কৃ+ তি = কৃতি।
√কৃত্ + তি = কীর্তি।
√কৃষ+ তি = কৃষ্টি।
√দৃশ্ + তি = দৃষ্টি।

৪. অ

√কাঁদ্ + অ = কাঁদ।
√ধর্+অ= ধর।
√চল্ + অ = চল।
√পড়্‌ + অ = পড়।

৫. অন > ওন

√নাচ্ + অন = নাচন।
√কাঁদ্ + অন = কাঁদন।

৬. আইত
√ডাক্ + আইত = ডাকাইত > ডাকাত।
√সের্ + আইত = সেবাইত > সেবায়েত।

৭. আনি

√জ্বাল্ + আনি = জ্বালানি।
√ঝাঁক্ + আনি = ঝাঁকানি।
√নিডু + আনি = নিড়ানি।

৮. উক, উকা

√মিশ্ + উক = মিশুক।
√খা + উকা = খাউকা > খেকো।

৯. তি

√উঠ+ তি = উঠতি।
√ঘাট্ + তি = ঘাটতি।
√কাট্ + তি = কাটতি।

১০. অ (ষ্ণ, অণু)

মনু + অ = মানব।
দনু + অ = দানব।
মধু+অ= মাধব।

১১. আয়ন (ষ্ণায়ন, ফক্)

নর + আয়ন = নারায়ণ।
দ্বীপ + আয়ন = দ্বৈপায়ন।
রাম + আয়ন = রামায়ণ

১২. ইক (জ্ঞিক, ঠক)

অক্ষর + ইক = আক্ষরিক।
ইতিহাস + ইক = ঐতিহাসিক।
বর্ষ + ইক = বার্ষিক।

common.content_added_by

অনুশীলনী

42
42

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন: (নমুনা)

১। প্রাতিপদিকের সঠিক উদাহরণ কোনটি?
ক. হাতল
খ. হাত
গ. হাতা
ঘ. হাভাত

২। নিচের কোনটি বিদেশী তদ্বিত প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দ?
ক. বাবু + আনা = বাবু আনা
খ. পঠ + অ = পাঠ
গ. ধন + ঈ = ধনী
ঘ. হাত+অল = হাতল

কর্ম-অনুশীলন

১. একটি পোস্টার পেপারে নিচের সংজ্ঞাগুলো সাইন পেন দ্বারা লিপিবদ্ধ কর।

প্রত্যয় :

কৃৎ প্রত্যয় :

তদ্ধিত প্রত্যয়:

প্রকৃতি :

ক্রিয়া-প্রকৃতি:

নাম-প্রকৃতি :

২. প্রদত্ত শব্দগুলোর প্রত্যয়ের নামসহ প্রকৃতি ও প্রত্যয় নির্ণয় করে নির্দেশমতো নিচের ছকে সাজাও:

প্রদত্ত শব্দ

প্রকৃতি + প্রত্যয়

প্রত্যয়ের নাম

দর্শনীয়
দেশীয়
গন্তব্য
উচ্চতর
নীলিমা
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion