নৈতিকতা ও প্লেজারিজম (পাঠ ২৪-২৬)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিরাপদ ও নৈতিক ব্যবহার | - | NCTB BOOK
98
98

আমরা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে যে দোকানগুলো আছে সেগুলো বাইরে থেকে দেখি, প্রত্যেকটা দোকানের দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখি না দরজাটা খোলা আছে কি না। যদি দরজাটা খোলাও থাকে আমরা অপরিচিত একজন মানুষের ঘরে ঢুকে যাই না। কেউ যদি ঢুকেও যায় সে দোকানের ভেতরের সব জিনিসপত্র লন্ডভন্ড করে চলে আসে না। সভ্য মানুষ হিসেবে আমাদের একটি নৈতিক দায়িত্ব থাকে। বরং যদি কখনো দেখা যায় কেউ তার দরজা ভুলে খুলে চলে গেছে, তাকে ডেকে এনে বলি দরজাটা বন্ধ করে যেতে।

তথ্য প্রযুক্তি আসার পর হুবহু এরকম একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ইন্টারনেটে আমরা যখন বিভিন্ন ওয়েবসাইট দেখি, সেখানে যে মানুষ বা প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইট তৈরি করেছে তার যে অংশটুকু সে আমাদের দেখাতে চাইছে আমরা সেই অংশটুকু দেখতে পাই। ওয়েবসাইটের নিজস্ব বা গোপন অংশটুকুতে আমাদের ঢোকার কথা নয়, প্রয়োজনও নেই। সেখানে যেতে পারে তাদের নির্দিষ্ট মানুষজন- যারা গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সেখানে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট তথ্য সাজিয়ে রাখে, বা কাজ করে। যাদের সেখানে যাবার অনুমতি নেই তারাও কিন্তু সেখানে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে। পাসওয়ার্ড জানা না থাকলেও সেটাকে পাশ কাটিয়ে অনেক সময় কেউ ওয়েবসাইটের ভেতরে ঢুকে যায়। সেখানে ভেতরে ঢুকে সে কোনো কিছু স্পর্শ না করে বের হয়ে আসতে পারে- আবার কোনো কিছু পরিবর্তন করে বা নষ্ট করেও চলে আসতে পারে। যেহেতু এই কাজগুলো করা হয় নিজের ঘরে একটা কম্পিউটারের সামনে বসে এবং যেখানে অনুপ্রবেশ হয় যেটা হয়তো লক্ষ মাইল দূরের কোনো জায়গা- অদৃশ্য একটি সাইবার জগৎ, লোকচক্ষুর আড়ালে, তাই সেটা ধরার উপায়ও থাকে না। এই প্রক্রিয়াটার নাম হচ্ছে হ্যাকিং এবং আজকাল নিয়মিতভাবে কম্পিউটারের ওয়েবসাইট হ্যাকিং হচ্ছে। কেউ যদি শুধু কৌতূহলী হয়ে অন্যের ওয়েবসাইটে ঢুকে কোনো ক্ষতি না করে বের হয়ে আসে তাকে বলে White hat hacker বা সাদা টুপি হ্যাকার আর যদি কোনো কিছু ক্ষতি করে আসে, নষ্ট করে বসে তখন তাকে বলে Black hat hacker বা কালো টুপি হ্যাকার। তোমরা শুনে অবাক হয়ে যাবে সাইবার ওয়ার্ল্ডে এরকম অসংখ্য সাদা টুপি আর কালো টুপি হ্যাকার প্রতিমুহূর্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে ওয়েবসাইটগুলোতে বেআইনিভাবে ঢোকা ততই কঠিন হয়ে যাচ্ছে- নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতি মুহূর্তেই আগের থেকে বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। তারপরও হ্যাকাররা বসে নেই। ১৯৮৩ সালে মাত্র ১৯ বছরের একটা ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনীর আন্তর্জাতিক যোগাযোগের নিরাপত্তা ভেদ করে তাদের ওয়েবসাইট হ্যাক করে ঢুকে গিয়েছিল।

বুঝতেই পারছ হ্যাকিং অনৈতিক কাজ। বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করতে বা বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে সবারই ইচ্ছে করে কিন্তু ওয়েবসাইটের হ্যাক করা সেরকম চ্যালেঞ্জ নয়। অনৈতিক চ্যালেঞ্জ নেয়ায় কোনো কৃতিত্ব নেই। যাদের বুদ্ধিমত্তার চ্যালেঞ্জ নেবার ইচ্ছে করে তাদের জন্যে শত শত সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলোই নিতে পারে।

যখন এসএসসি, এইচএসসি বা সমমানের পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় তখন ওয়েবসাইটে সেটা দিয়ে দেয়া হয়। তোমাদের অনেকেই হয়তো লক্ষ করেছ প্রথম যখন সেটা প্রকাশিত হয়, আর সবাই একসাথে যখন সেটা দেখার চেষ্টা করে তখন অনেক সময়ই দেখা যায় ওয়েবসাইটটি কাজ করছে না। কেউ আর কিছু দেখতে পাচ্ছে না। সেটা অস্বাভাবিক কিছু না- সবকিছুর একটা ধারণ ক্ষমতা থাকে, কাজেই ধারণ ক্ষমতার বেশি হয়ে গেলে ওয়েবসাইট আর সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। স্বাভাবিক কারণেই সেটা হতে পারে। আবার অনেক সময় কেউ ইচ্ছে করে সেরকম একটা পরিবেশ তৈরি করে ফেলতে পারে যেখানে একটা কম্পিউটারের একটা প্রোগ্রাম কৃত্রিমভাবে কোনো একটা ওয়েবসাইটে প্রতি সেকেন্ডে শত সহস্রবার প্রবেশ করতে পারে- তখন তার ধাক্কায় ওয়েবসাইটটি অচল হয়ে পড়ে। কাজেই এটাও অনৈতিক কাজ, ইচ্ছে করে একটা ওয়েবসাইট অচল করে দেয়ার মাঝে কোনো কৃতিত্ব নেই।

আজকাল অনেক পত্রপত্রিকাও ওয়েবসাইটে দেয়া হয়। অনেক পত্রপত্রিকাতেই একটা খবর বা কোনো একটা লেখার পিছনে পাঠকরা নিজেদের মন্তব্য লিখতে পারে। পাঠক ইচ্ছে করলেই অনেক সুচিন্তিতভাবে একটা খাঁটি মন্তব্য লিখতে পারে- কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায় একজন পাঠক শুধু শুধু যুক্তিহীন, অশালীন একটা কথা লিখে রেখেছে। বিষয়টি নিয়ে কিছু করার নেই-কিন্তু সবাইকে জানতে হবে বিষয়টা অনৈতিক।

আজকাল দেশ-বিদেশের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাই ইন্টারনেটে থাকে। অনেক জায়গায় পাঠকরা সরাসরি মন্তব্য লিখতে পারে

ইন্টারনেটে যেহেতু মানুষের নিজের মত প্রকাশের বিশাল স্বাধীনতা রয়েছে- যে কেউ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে সেটা প্রকাশ করতে পারে। তাই মাঝে মাঝে সেটাকে অপব্যবহার করা হয়। ই-মেইলে অনেক সময় কাউকে আঘাত দিয়ে কিংবা হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হয়। লুকিয়ে করা হয় বলে সেটা নিয়ে অনেক সময় কিছু করাও যায় না। কখনো কখনো দেখা যায় কোনো একজনকে অসম্মান করার জন্যে তার সম্পর্কে মিথ্যা কিংবা অসম্মানজনক কোনো তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হয়। অসংখ্য মানুষের কাছে তথ্য পাঠানোর যে কাজটি আগে কঠিন ছিল এখন সেটি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। কাজেই সেই কাজটি ভালোভাবে ব্যবহার না করে যখনই খারাপভাবে ব্যবহার করা হয় তখনই বুঝতে হবে নৈতিকতা রক্ষা করা হয়নি।

দলগত কাজ
হ্যাকিং করে কোনো একটি ওয়েবসাইট নষ্ট করে দিলে সেই ক্ষতিটুকু কোথা থেকে শুরু করে কোথার পর্যন্ত যেতে পারে সেটি বের করো। তোমার বক্তব্যের পেছনে যুক্তি দেওয়ার জন্যে সম্ভাব্য হ্যাকিংয়ের একটা উদাহরণ দাও।

কখনো কখনো ইন্টারনেট বা তথ্য প্রযুক্তিতে শুধু যে অনৈতিক কাজ করা হয় তা কিন্তু নয়- সীমা অতিক্রম করে বেআইনি কাজও করার চেষ্টা করা হয়। ওয়েবসাইট হ্যাকিং করা শুধু যে অনৈতিক কাজ তা নয়, সেটা একই সাথে বেআইনি কাজ।
ইন্টারনেটে এরকম অনেক ধরনের মানুষ অনেক ধরনের অনৈতিক আর বেআইনি কাজ করে ফেলে। আমাদের সেগুলো জানা থাকা ভালো। যেহেতু পুরো বিষয়টা হয় সাইবার জগতে, চোখের আড়ালে তাই প্রতারণার কাজটি হয় সবচেয়ে বেশি। যেমন হয়তো কারো সাথে যোগাযোগ করে বলা হলো যে সে লটারিতে অনেক টাকা পেয়েছে। টাকাটা নিতে হলে অমুক জায়গায় যোগাযোগ করতে হবে। সরল বিশ্বাসে হয়তো সেই মানুষটি যোগাযোগ করে। তখন তাকে বোঝানো হয় কিছু টাকা দিলে বড় পুরস্কারটা পেয়ে যাবে। অনেক সময় মানুষটি সেই টাকা দিয়ে প্রতারণার ফাঁদে পড়ে যায়। আবার কেউ হয়তো জানায় যে, তার হাতে অনেক টাকা চলে এসেছে এবং সে টাকাটা নিরাপদে রাখতে চায়- তখন অনেকে লোভে পড়ে সেই ফাঁদে পা দেয়। কাজেই সবার জানা থাকা ভালো অপরিচিত ই-মেইলের এরকম অবিশ্বাস্য লোভনীয় আশ্বাস নিঃসন্দেহে প্রতারণা।

ইন্টারনেটের বড় একটি অপরাধ হয় ক্রেডিট কার্ড নিয়ে। তোমরা সবাই নিশ্চয়ই জেনে গেছ আজকাল কাগজের নোট দিয়ে টাকা-পয়সার লেনদেন খুব দ্রুত কমে আসছে। পৃথিবীর অনেকেই সেটি করে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে। ইন্টারনেটে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে হলে সেই কার্ডটিরও প্রয়োজন হয় না-শুধু নম্বরটি জানলেই চলে। কাজেই, মানুষের ক্রেডিট কার্ডের নম্বর জানার জন্য বড় বড় অপরাধীরা অনেক বড় বড় সাইবার অপরাধ করে। সাধারণত যখন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা হয় তখন নিরাপত্তার বিষয়টিতে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়- সেখান থেকে নম্বরটি বের করা কঠিন। কিন্তু প্রতারকরা মানুষকে প্রতারণা করে ধোঁকা দিয়ে নম্বরটি জেনে নেবার চেষ্টা করে এবং মানুষটি বোঝার আগে সেই নম্বরটি ব্যবহার করে বড় অঙ্কের টাকা তুলে নেয়।

অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে প্রতারকরা এ রকম ই-মেইল পাঠিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার চেষ্টা করে

আজকাল অপরাধীরাও ইন্টারনেটকে ব্যবহার করা শুরু করেছে। তারা তাদের অবৈধ কাজের তথ্য ইন্টারনেটের ভেতর দিয়ে পাচার করে। সারা পৃথিবীতেই সেজন্য আইন পাস করা হচ্ছে। যাদের প্রচলিত আইনে বিচার করা যায় না তাদেরকে এই বিশেষ আইন দিয়ে বিচার করতে হয়।

পৃথিবীতে অনেক বিভ্রান্ত মানুষ থাকে যারা ভুল বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকে। বাম বা ডান চরমপন্থী অনেক মানুষ বা দল আছে। তারা তাদের বিশ্বাসকে ইন্টারনেটের ভেতর দিয়ে প্রচার করার চেষ্টা করে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এমনও দেখা গেছে যে একটি সংগঠন হতাশ মানুষকে আরও হতাশ করিয়ে দিয়ে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

তবে তোমাদের এসব নিয়ে আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই। তোমাদের জানতে হবে তথ্য প্রযুক্তি, ইন্টারনেট কিংবা সাইবার জগৎ একটি অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যম। এটাকে ভুলভাবে ব্যবহার করে কিছু মানুষ হয়তো বড় ধরনের অন্যায় অপরাধ করে ফেলতে পারে কিন্তু তাদের সংখ্যা খুব কম। আমরা যদি একটুখানি সতর্ক থাকি তাহলেই এই অপরাধী মানুষের পেতে রাখা ফাঁদে আমরা কখনোই পা দেব না। আমরা শুধু সুন্দর আর আমাদের জন্যে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ব্যবহার করতে পারব।

কম্পিউটার ভাইরাসের কথা তোমরা আগেই জেনেছ। অনেকে মজা করার জন্য হোক বা অপরাধ করার জন্যেই হোক, নানা ধরনের কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করে সেটাকে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। সেগুলো ইন্টারনেটের ভেতর দিয়ে আমাদের ঘরের ভেতরে কম্পিউটারে ঢুকে পড়ে। ছোটখাটো যন্ত্রণা থেকে শুরু করে সেগুলো অনেক বড় বড় সমস্যা ঘটাতে পারে। Mydoom Worm নামে একটা কম্পিউটার ভাইরাস ২০০৪ সালের জানুয়ারি মাসে একদিনে আড়াই লক্ষ কম্পিউটারকে আক্রান্ত করেছিল। ১৯৯৯ সালে Melissa নামে একটা কম্পিউটার ভাইরাস এত শক্তিশালীভাবে সাইবার জগৎকে আক্রমণ করেছিল যে, মাইক্রোসফটের মতো বড় কোম্পানিকে তাদের ই-মেইল সার্ভারকে বন্ধ রাখতে হয়েছিল। ভাইরাসের কারণে পৃথিবীতে কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

মেলিসা ভাইরাস তৈরি করার অপরাধে ডেভিড স্মিথ নামে এই মানুষটির দশ বছর জেল হয়েছিল

দলগত কাজ
কম্পিউটারে বেআইনি কাজ করে বিপদে পড়েছে এর উপর ভিত্তি করে একটা কার্টুন আঁকো।

প্লেজারিজম:
নিজের লেখায় অন্যের লেখা কোনো কিছু ব্যবহার করতে হলে সবসময় সেটি পরিষ্কার করে বলে অন্যের অবদান স্বীকার করতে হয়।

তথ্যসূত্র ও টীকা
১. যার অন্তর্নিহিত মৌল সুর এক সুনির্দিষ্ট শিল্পাদর্শ ও শিল্পতাত্ত্বিক পটভূমির উপর স্থাপিত। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ক্রমসঞ্চারমান নাট্যবৃত্ত ও তাত্ত্বিকবোধে আমরা লক্ষ করি তাঁর স্বদেশ ও শিল্পভাবনার পরিণতিশীল এক অভিযাত্রা।
২. ড. আহমেদ আমীনুল ইসলাম, স্বদেশ ও শিল্পতত্ত্বের পটভূমিকায় নাট্যকার সেলিম আল দীন, থিয়েটার স্টাডিজ, সেলিম আল দীন সংখ্যা, জুন ২০০৮, সংখ্যা-১৫, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার, ঢাকা, পৃষ্ঠা-৬১।
৩. সৈয়দ শামসুল হক, সেলিম আল দীন কর্তৃক রচিত 'চাকা' নাটকের প্রচ্ছদভূমিকা।
৪. ড. আফসার আহমদ, সেলিম আল দীনের শিল্পতত্ত্ব ও বিশ্ববীক্ষা, থিয়েটার স্টাডিজ, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-২৬।
৫. বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসমূহের উপকথা, রূপকথা, ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমার ঔৎসুক্য জাগে... ১৯৮৬ সালে ঢাকা থিয়েটার আয়োজিত 'জাতীয় নাট্যমেলা'য় আমরা এদেশে বিভিন্ন ভাষাভাষী নৃগোষ্ঠীসমূহের সঙ্গে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ সাধনের সংকল্প উচ্চারণ করি।

আমরা যখন লেখাপড়া করি তখন আমরা অনেক নতুন নতুন জিনিস শিখি যা আগে জানতাম না- তার সাথে সাথে আমরা আরও একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখি, সেটা হচ্ছে সত্যিকারের মানুষ হওয়া, খাঁটি মানুষ হওয়া। খাঁটি মানুষেরা অন্যায় করে না, অন্যায় সহ্যও করে না। নিজেরা অন্যায় করে না, অন্যদেরকেও অন্যায় করতে দেয় না। আমরা সব সময় স্বপ্ন দেখি আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যখন লেখাপড়া করবে তখন অন্য অনেক নতুন জিনিস শেখার সাথে সাথে সত্যিকারের মানুষ হওয়াটাও শিখবে।

তারপরেও আমরা মাঝে মাঝে দেখি ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার সময় দেখাদেখি করে। তোমরা কখনো কখনো দেখে থাকবে বড় কোনো পরীক্ষার সময় কিছু ছাত্রছাত্রী নকল করতে গিরে ধরা পড়ছে, তাদের পরীক্ষার হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে- এই ছাত্রছাত্রীরা নির্বুদ্ধিতা করে নিজেদের ভবিষ্যৎটাকেই নষ্ট করে ফেলছে।

প্লেজারিজমের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়াকে তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

এরকম ব্যাপার পৃথিবীর সব জায়গাতেই দেখা যায়- তথ্য প্রযুক্তির যুগে এই বিষয়গুলো হঠাৎ করে নতুন একটা মাত্রা পেয়েছে। লেখাপড়া করতে গেলেই হোমওয়ার্ক করতে হয়। হোমওয়ার্কগুলো সব সময়েই নিজে করতে হয়। অন্য কেউ হোমওয়ার্ক করে দিলে হয়তো ভালো নম্বর পাওয়া যায় কিন্তু শেখা তো হয় না। হোমওয়ার্ক নানা ধরনের হতে পারে-ছাত্রছাত্রীরা যতই বড় ক্লাসে যায় ততই তাদেরকে আরো বড় বড় হোমওয়ার্ক করতে হয়। বড় রচনা লিখতে হয়, বড় প্রজেক্ট লিখতে হয়। যারা সত্যিকারের ছাত্র তারা নিজেরা পড়াশোনা করে খাটাখাটি করে গবেষণা করে সুন্দর সুন্দর রচনা লেখে। অনেক সময়েই কোনো কোনো শিক্ষার্থী সেই পরিশ্রম করতে রাজি হয় না। যেহেতু ইন্টারনেটে পৃথিবীর প্রায় সব বিষয়েই কিছু না কিছু তথ্য আছে তাই তারা সেখান থেকে হুবহু বিষয়টা নিয়ে নিজের নামে জমা দিয়ে দেয়। কিন্তু অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া বা প্রকাশ করাকেই প্লেজিয়ারিজম বা লেখাচুরি বলে।

তোমরা সম্ভবত শব্দটা আগে শোননি, সত্যিকথা বলতে কী তোমরা যদি বড়দেরকে জিজ্ঞেস করো দেখবে তাদের অনেকেই এটা হয়তো আগে শোনেননি। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির যুগে এই শব্দটার সাথে পরিচিত হওয়া দরকার, কারণ এটা পৃথিবীতে বড় একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বুঝে হোক না বুঝে হোক অনেকেই প্লেজারিজম করছে-এবং তাদের অনেকেই এজন্য খুব বড় বিপদে পড়ে যায়।

আমরা অবশ্যই অন্যের লেখা পড়ে শিখব এবং নিজেরা কিছু লেখার সময় অন্যের লেখার সাহায্য নেওয়াটাও অন্যায় কিছু নয়। কিন্তু অন্যের কাছ থেকে কোনো সাহায্য নিলে নিজের লেখায় সেটা খুব পরিষ্কারভাবে বলে দিতে হয়। কোন অংশটুকু তুমি নিজে লিখেছ আর কোন অংশটা অন্যের লেখা থেকে নিয়েছ সেগুলো যদি খুব স্পষ্ট থাকে তাহলেই কোনো সমস্যা হয় না।

তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্লেজারিজম যেমন বেড়েছে ঠিক সেরকম প্লেজারিজম ধরার কৌশলও অনেক বেড়েছে। তোমরা কি জানো কোনো মানুষ যদি ইন্টারনেটের কোনো জায়গা থেকে কোনো কিছু হুবহু টুকে নেয় সেটা কম্পিউটার সফটওয়ার ব্যবহার করে সাথে সাথে খুঁজে বের করা যায়?
অন্যায় করলে সেটা নিজের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে-কিন্তু নিজের জন্য বিপজ্জনক সেজন্য নয়, তোমরা কখনোই কোনো অন্যায় করবে না। কারণ তোমরা বাংলাদেশের একেবারে খাঁটি মানুষ হয়ে বড় হবে এবং বড় হয়ে তোমরাই একদিন এই দেশের দায়িত্ব নেবে।

দলগত কাজ: ক্লাসের সবাই দুটি দলে ভাগ হয়ে প্লেজারিজম আর নিজের তৈরি করা কাজের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে একটি বিতর্কের আয়োজন করো।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion