তাপমাত্রার পরিমাপ (পাঠ ৩-৫)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান তাপ ও তাপমাত্রা | - | NCTB BOOK
70
70

আমরা আগের কাজটিতে দেখেছি গরম পানিপূর্ণ গ্লাসটি দুই মিনিট পরপর হাত দিয়ে ধরলে গরমের অনুভূতি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। কোনোদিন সকালে কম গরম থাকে কিন্তু দুপুরে গরম বেশি থাকে। আমরা কোনো কিছু ধরলে বা আমাদের ত্বকের স্পর্শে কিছুটা বুঝতে পারি গরম বেড়েছে না কমেছে। কিন্তু একেবারে সঠিকভাবে বলা যায় না কতটা গরম বেড়েছে। সঠিকভাবে বলার জন্য আমরা যন্ত্রের সাহায্যে তাপমাত্রা মেপে থাকি। তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্রের নাম হলো থার্মোমিটার। থার্মোমিটার ব্যবহার করে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। আবহাওয়াবিদগণ বায়ুর তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মোমিটার ব্যবহার করেন। শিল্পকারখানায় নির্দিষ্ট তাপমাত্রা বজায় রাখতে হয়। সেজন্য কল কারখানাতেও থার্মোমিটার ব্যবহার করে তাপমাত্রা মাপা হয়।

তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে তরল পদার্থের আয়তন বাড়ে বা কমে। তরল পদার্থের আয়তন কতটুকু বাড়ে বা কমে তা মেপে তাপমাত্রা কতটুকু বাড়ে বা কমে গেল তা বের করা হয়। থার্মোমিটারে পারদ, অ্যালকোহল ইত্যাদি তরল ব্যবহার করে তাপমাত্রা মাপা হয়। নিচে একটি পারদ থার্মোমিটারের বর্ণনা দেওয়া হলো।

পারদ থার্মোমিটার: যে থার্মোমিটারে পারদ ব্যবহার করে তাপমাত্রা মাপা হয়, তাই পারদ থার্মোমিটার। আমরা সবাই জ্বর মাপার থার্মোমিটার দেখেছি। এটি একটি পারদ থার্মোমিটার। পাশের চিত্রের মতো এ থার্মোমিটারে সরু ও সুষম ছিদ্রযুক্ত একটি সরু কাঁচনল থাকে। নলটির একপ্রান্তে পাতলা দেয়ালসহ একটি বাল্ব থাকে। বাল্বটি পূর্ণ করে ফাঁপা নলটির কিছু অংশে পারদ ভরা হয়। নলের বাকি অংশে খুব সামান্য পরিমান পারদ বাষ্প থাকে। নলটির গায়ে তাপমাত্রা পরিমাপের নির্দিষ্ট স্কেল অনুযায়ী দাগ কাটা হয়। থার্মোমিটারের নলের ছিদ্রটি খুব সরু। তাই বাল্বের তাপমাত্রা একটু বাড়লেই সরু ছিদ্র দিয়ে পারদ অনেকখানি উপরে উঠে যায়। পারদ নলের কোন দাগ পর্যন্ত উঠল তা দেখে বোঝা যায় তাপমাত্রা কতটুকু বেড়েছে।

নিজেরা কর: থার্মোমিটারের সাহায্যে জ্বর নির্ণয়।
মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এর চেয়ে তাপমাত্রা বেশি হলে জ্বর হয়েছে বলে ধরা হয়। একটি ডাক্তারি থার্মোমিটার ব্যবহার করে তোমার শ্রেণির পাঁচজন শিক্ষার্থীর শরীরের তাপমাত্রা মেপে খাতায় লিখ। এ থেকে সিদ্ধান্ত নাও কারো জ্বর হয়েছে কিনা?

তাপমাত্রা পরিমাপের স্কেল

কোনো কিছু পরিমাপের জন্য একটি নির্দিষ্ট আদর্শমান ঠিক করে নেওয়া হয়। তারপর সেই আদর্শমানের সাথে তুলনা করে নতুন কোনো কিছুর পরিমাপ বের করা হয়। তাপমাত্রা পরিমাপেরও এ রকম আদর্শমান আছে।
এক্ষেত্রে দুটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ব্যবধানের একটি অংশকে আদর্শমান হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এই দুটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রাকে স্থিরাঙ্ক বলে। একটিকে নিম্ন স্থিরাঙ্ক ও অন্যটিকে ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ক বলে।
হিমাঙ্ক: স্বাভাবিক চাপে যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ বরফ গলে পানিতে পরিণত হয়, সেই তাপমাত্রাকে হিমাঙ্ক বলে। হিমাঙ্ককে থার্মোমিটারের নিম্ন-স্থিরাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

স্ফুটনাঙ্ক: স্বাভাবিক চাপে যে তাপমাত্রায় বিশুদ্ধ পানি ফুটে বাষ্পে পরিণত হয়, সেই তাপমাত্রাকে স্ফুটনাঙ্ক বলে। স্ফুটনঙ্ককে থার্মোমিটারে ঊর্ধ্ব-স্থিরাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

ঊর্ধ্ব ও নিম্ন স্থিরাঙ্কের মধ্যবর্তী ব্যবধানকে বিভিন্ন সংখ্যক সমান অংশে ভাগ করা যায়। এ ব্যবধানকে কয়টি সমান অংশে ভাগ করা হলে তার ভিত্তিতে বিভিন্ন স্কেল পাওয়া যায়। তাপমাত্রা পরিমাপের কয়েকটি স্কেল প্রচলিত। নিচে আমরা দুটি স্কেল নিয়ে আলোচনা করব।

সেলসিয়াস স্কেল: এ স্কেলে নিম্ন স্থিরাঙ্ককে ০ ডিগ্রি (০) এবং ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ককে ১০০ ডিগ্রি (১০০) ধরা হয়। মধ্যবর্তী ব্যবধানকে সমান একশত ভাগে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক ভাগকে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস (১সে.) বলা হয়।

বিজ্ঞানী সেলসিয়াস এ স্কেল উদ্ভাবন করেন বলে তার নাম অনুসারে এ স্কেলটিকে সেলসিয়াস স্কেল বলা হয়। বৈজ্ঞানিক কাজে এ স্কেল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অন্যান্য কাজেও বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ স্কেল ব্যবহার করা হয়। যেমন আবহাওয়ার খবরে বলা হয়, দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। o deg থেকে ১০০-এর মধ্যবর্তী দূরত্বকে ১০০ ভাগে ভাগ করা হয় বলে একে সেন্টিগ্রেড (Centi অর্থ একশত এবং grade অর্থ ভাগ) স্কেলও বলা হয়।

ফারেনহাইট স্কেল: এ স্কেলে নিম্ন স্থিরাঙ্ককে ৩২ ডিগ্রি (৩২) এবং ঊর্ধ্ব স্থিরাঙ্ককে ২১২ ডিগ্রি (২১২) ধরা হয়। মধ্যবর্তী ব্যবধানকে সমান ১৮০ ভাগে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক ভাগকে এক ডিগ্রি ফারেনহাইট ( ১ ফা.) বলা হয়।

বিজ্ঞানী ফারেনহাইট এ স্কেল উদ্ভাবন করেন বলে তার নাম অনুসারে এ স্কেলকে ফারেনহাইট স্কেল বলা হয়। যেমন জ্বর হলে কেউ হয়ত বলে থাকেন জ্বর ১০১ ডিগ্রি। আসলে গায়ের তাপমাত্রা ছিল ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

সেলসিয়াস ও ফারেনহাইট স্কেলের সম্পর্ক

সেলসিয়াস স্কেলে তাপমাত্রা জানা থাকলে আমরা তাকে ফারেনহাইট স্কেলে রূপান্তর করতে পারি। আবার F-32 উল্টোটাও করা যায়। এর জন্য আমাদের একটি সমীকরণ জানতে হবে। সমীকরণটি হলো C5=F-329 যেখানে C হলো সেলসিয়াস স্কেলে তাপমাত্রা এবং F হলো ফারেনহাইট স্কেলে তাপমাত্রা। এবার একটি উদাহরণ দেখা যাক।

উদাহরণ: বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একজন খেলোয়াড় অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল। সেখানকার ডাক্তার তার গায়ের তাপমাত্রা মেপে বলল তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফারেনহাইট স্কেলে ঐ খেলোয়াড়ের তাপমাত্রা কত?

আমরা জানি C5=F-329

এখানে C = 38
সুতরাং 385=F-329

বা, 5×(F - 32) = 9 × 38

বা, F - 32 = 342/5

বা, F = 68.4 + 32 = 100.4

অর্থাৎ ফারেহাইট স্কেলে ঐ খেলোয়াড়ের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

কাজ: একটি সেলসিয়াস স্কেল বিশিষ্ট থার্মোমিটার ও সাধারণ জ্বর মাপার একটি ফারেনহাইট স্কেলবিশিষ্ট থার্মোমিটার নাও। ক্লাসের ৫জন বন্ধুর গায়ের তাপমাত্রা ফারেনহাইট স্কেল ব্যবহার করে পরিমাপ কর। পরিমাপকৃত তাপমাত্রা সূত্র ব্যবহার করে সেলসিয়াস স্কেলে রূপান্তর করে নিচের ছক (নিজের খাতায় ছকটি করে নিতে হবে) পূরণ কর।

শিক্ষার্থীর নামফারেনহাইট স্কেলে তাপমাত্রাসেলসিয়াস স্কেলে তাপমাত্রামন্তব্য
১।
২।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion