জনসংখ্যার পরিবর্তনশীল অবস্থাকে জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতা বলা হয়। পরিবর্তনশীলতা জনসংখ্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জনসংখ্যার এই পরিবর্তন প্রধানত জন্মহার, মৃত্যুহার, স্থানান্তর ও সামাজিক গতিশীলতার উপর নির্ভর করে। জনসংখ্যার পরিবর্তনের এই বিষয়গুলো বয়স, লিঙ্গ, বিবাহ, সমাজকাঠামো, ধর্মীয় মূল্যবোধ, শিক্ষা, পেশা প্রভৃতির উপর নির্ভরশীল। একটি দেশের জনসংখ্যার বয়স কাঠামোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: যুবক, প্রাপ্তবয়স্ক এবং বৃদ্ধ। কোন বয়সে একটি ছেলে বা মেয়ের বিয়ে হচ্ছে তার উপর স্থল জন্মহার নির্ভর করে। কোনো দেশে বাল্যবিবাহ বেশি হলে সে দেশের জন্মহার বেশি হবে। জন্মহার কিংবা মৃত্যুহার একটি দেশের জনসংখ্যার কাঠামোকে পরিবর্তন করে থাকে। সুতরাং জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতা বলতে বোঝায় জনসংখ্যার কাঠামোর পরিবর্তনকে। জনসংখ্যার এই কাঠামো পরিবর্তনের সাথে কতগুলো বিষয় জড়িত। যেমন- ভৌগোলিক পরিবেশ, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদ, ভূমিরূপ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রভৃতি। যে দেশের জনসংখ্যা যত বেশি শিক্ষিত সে দেশ তত বেশি উন্নত। জ্ঞানের পরিবর্তনের প্রভাব শিক্ষিত লোকের ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। ফলে তারা ছোটো পরিবার গঠন করে। পেশাগত পার্থক্যের কারণেও জন্মহারের তারতম্য ঘটে। যেমন-কৃষক, শ্রমিক, জেলে এদের জন্মহার বেশি। ডাক্তার, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার প্রভৃতি পেশাজীবী শ্রেণির জন্মহার কম।
বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলো পাহাড় ও পর্বতে ঘেরা বলে এখানে জনবসতি কম। ফলে এ এলাকার জনসংখ্যার ঘনত্বও সর্বনিম্ন। চর এলাকাও মূল ভূখণ্ড থেকে বিছিন্ন বলে এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব কম। অন্যদিকে নদীবিধৌত উর্বর সমতলভূমিতে কৃষির ফলন বেশি হওয়ার কারণে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। তাছাড়া শিল্প কারখানা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে এমন অঞ্চলে জনসংখ্যার আধিক্য রয়েছে। অনেক সময় কর্মসংস্থানের প্রত্যাশায় গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের হার বেড়ে যায়। আবার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, যুদ্ধাবস্থা, গৃহযুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে স্থানান্তর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হওয়ায় জনসংখ্যা কাঠামোতে পরিবর্তন দেখা দেয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭২.৩ বছর। গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় এটা পরিষ্কার যে আমাদের দেশে মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে। মৃত্যুহার হ্রাস পাওয়ায় বৃদ্ধ বয়সী জনসংখ্যার হার দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যাদেরকে নির্ভরশীল জনসংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই নির্ভরশীল জনসংখ্যা আমাদের দেশে সীমিত সম্পদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। শিক্ষাক্ষেত্রে অধিক হারে ছেলে-মেয়েদের অংশগ্রহণ নারীর অধিকার রক্ষা ও উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ, ছোটো পরিবার গঠনের পক্ষে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি পদক্ষেপ মৃত্যুহার হ্রাসে প্রভাব ফেলছে। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। এটি জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতায় ভূমিকা রাখছে। তবে জনসংখ্যাকে ভারসাম্য পর্যায়ে রাখতে আমাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ প্রয়োজন। যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন তাহলো মেয়েদের বিয়ের বয়স বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাসে কার্যক্রম গ্রহণ, জন্মনিয়ন্ত্রণ আন্দোলন জোরদার করা, নারীর কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাস্তবায়ন প্রভৃতি।
কাজ-১: তোমার নিজ এলাকার জনসংখ্যা পরিবর্তনশীলতার কারণগুলো চিহ্নিত কর। কাজ-২: "বিবাহ, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির কারণেই জনসংখ্যার পরিবর্তনশীলতা লক্ষ করা যায়। দলীয় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির যুক্তিপূর্ণ সমাধান কর। |
common.read_more