বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়ে সরল উপাদানে পরিণত হয়, অবশেষে রক্তের মধ্যে শোষিত হয়ে দেহের বিভিন্ন অংশে পরিচালিত হয়। পরিপাকের জন্য অপরিহার্য এনজাইমসমূহ লালারস, পাচক রস, অগ্ন্যাশয় রস ও আন্ত্রিক রসে অবস্থিত। এ ছাড়া পিত্তরস পরিপাক কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। বিভিন্ন খাদ্য উপাদান বিভিন্ন এনজাইমের উপস্থিতিতে বিভিন্নভাবে ও ভিন্ন গতিতে পরিপাক হয়ে থাকে। খাদ্যের কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাট পরিপাকের জন্য সবচেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হয়। খাদ্য মুখগহ্বর হতে মলদ্বার পর্যন্ত আসার জন্য প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। নিম্নে বিভিন্ন খাদ্য উপাদানের পরিপাক পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।
কার্বোহাইড্রেটের পরিপাক (Digestion of Carbohydrates ) - শক্তির প্রধান উৎস হচ্ছে - কার্বোহাইড্রেট। আমাদের দৈনিক শক্তি চাহিদার ৬০%-৮০% কার্বোহাইড্রেট থেকে গ্রহণ করি। কার্বোহাইড্রেট দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে। ভাত, রুটি, আলু, চিনি, গুড়, মধু, ফল ইত্যাদি কার্বোহাইড্রেটের প্রধান উৎস। এ সকল খাদ্যদ্রব্য পরিপাকের মাধ্যমে সরল উপাদানে পরিণত হয় এবং পরে শক্তি উৎপন্ন করে। মনোস্যাকারাইডের কোনো পরিপাকের প্রয়োজন হয় না। এরা সরাসরি রক্তে বিশ্লেষিত হতে পারে। ডাইস্যাকারাইড ভেঙ্গে দুটি মনোস্যাকারাইড উৎপন্ন হয় এবং পলিস্যাকারাইড ভেঙে প্রথমে ডাইস্যাকারাইড এবং পরে মনোস্যাকারাইড উৎপন্ন হয়।
পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে কার্বোহাইড্রেট পরিপাকের পর শোষণযোগ্য উপাদানে পরিণত হয় ও শোষিত হয় ৷
ফ্যাটের পরিপাক (Digestion of Fat ) –ফ্যাটকে ঘনীভূত শক্তির উৎস বলা হয়। কারণ খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে ফ্যাটই সবচেয়ে বেশি তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে থাকে। ফ্যাটের প্রধান উৎস হচ্ছে তেল, ঘি, মাখন, চর্বিযুক্ত মাংস, তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, দুধের সর ইত্যাদি। ফ্যাট-জাতীয় খাদ্য ভেঙে গ্লিসারল ও ফ্যাটি এসিডে পরিণত হয়। পাকস্থলিতে পিত্তলবর্ণের অভাব থাকায় এখানে ফ্যাটের সম্পূর্ণ পরিপাক হয় না।
প্রোটিনের পরিপাক (Digestion of Protein) – খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে প্রোটিন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি প্রাণি ও উদ্ভিজ কোষে প্রোটিন আছে। প্রোটিন এর প্রধান কাজ হচ্ছে দেহের গঠন, ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা। প্রোটিন সর্বাপেক্ষা জটিল জৈব পদার্থ । বড় বড় প্রোটিন অণু পরিপাক হয়ে এর গাঠনিক একক অ্যামাইনো এসিডে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত শরীরে কোনো কাজে লাগে না ।
পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রোটিন পরিপাকের পর শোষণযোগ্য উপাদান অ্যামাইনো এসিডে পরিণত হয় ও শোষিত হয়।
কাজ – কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট পরিপাকের পর কী কী উপাদান উৎপাদিত হয়?
common.read_more