কাজ, শক্তি, ক্ষমতা (অধ্যায় ৮)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - আর্কাইভ - বিজ্ঞান বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ | - | NCTB BOOK
452
452

এই অধ্যায়ের শেষে শিক্ষার্থীরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলো শিখতে পারবে—

  • কাজ, শক্তি, ক্ষমতা
  • শক্তির বিভিন্ন রূপ
  • শক্তির নিত্যতা
  • শক্তির রূপান্তর
common.content_added_by

কাজ

185
185

আমরা দৈনন্দিন জীবনে কাজ শব্দটা অনেকভাবে ব্যবহার করি। একজন দারোয়ান গেটের সামনে একটি টুলে বসে সারা দিন বাসা পাহারা দিয়ে দাবি করতে পারেন তিনি অনেক কাজ করেছেন; কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় সেটি কোনো কাজ নয়। পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় কাজ কথাটার সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে। কোনো বস্তুর উপর যদি বল প্রয়োগ করে যেদিকে বল প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেদিকে বস্তুটিকে একটা দূরত্ব সরানো যায় তাহলে বলা হয় বলটি কাজ করেছে! আমরা বল প্রয়োগ বলতে কোনো কিছুকে ধাক্কা দেওয়া, টানা, ঠেলে দেওয়া, আকর্ষণ কিংবা বিকর্ষণ করাকে বোঝাই। অর্থাৎ যদি F বল প্রয়োগ করে বস্তুটিকে বলের দিকে s দূরত্ব অতিক্রম করানো হয়, তাহলে ঐ বল দিয়ে করা কাজের পরিমাণ W হচ্ছে:
W = Fs

যেখানে কাজের একক হচ্ছে জুল। কাজেই আমরা যদি কোনো কিছুর উপর বল প্রয়োগ করে বস্তুটিকে নাড়াতে না পারি তাহলে আমাদের যত পরিশ্রমই হয়ে থাকুক না কেন কোনো কাজ হয়নি বলে ধরে নিতে হবে। ঠিক একইভাবে যদি যেদিকে বল প্রয়োগ করা হয়েছে, বস্তুটি সেদিকে না গিয়ে বলের সমকোণে সরে যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে তখনও কোনো কাজ করা হয়নি। বলের আকর্ষণে যখন কোনো বস্তু তাকে ঘিরে বৃত্তাকারে ঘোর তখন এই ব্যাপারটি ঘটে। যার অর্থ সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবী যখন তাকে ঘিরে বৃত্তাকারে ঘোরে কিংবা পৃথিবীর আকর্ষণে যখন চাঁদ পৃথিবীকে ঘিরে বৃত্তাকারে ঘোরে তখন কোনো কাজ করা হয় না!

F বল প্রয়োগ করে কোনো বস্তুকে s দূরত্ব অতিক্রম করানো হলে কাজের পরিমাণ Fs
একটি ভারী বস্তুকে সরানোর জন্য যত পরশ্রমই করা হোক না কেন, বস্তুটি সরাতে না পারলে মোট কাজের পরিমাণ শূন্য।
common.content_added_by

শক্তি

186
186

শক্তি বলতে কী বোঝায় আমাদের সবার মধ্যে তার একটা ভাসাভাসা ধারণা আছে, কারণ আমরা কথাবার্তায় বিদ্যুৎশক্তি, তাপশক্তির কথা বলে থাকি। মধ্যে মধ্যে আমরা রাসায়নিক শক্তি বা নিউক্লিয়ার শক্তির কথাও শুনে থাকি। আলোকে শক্তি হিসেবে সেভাবে বলা না হলেও আমরা অনুমান করতে পারি, আলোও হচ্ছে এক ধরনের শক্তি। দৈনন্দিন কথাবার্তায় যে শক্তিটার কথা খুব বেশি বলা হয় না, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানে অসংখ্যবার যে শক্তির কথা বলা হবে সেটা হচ্ছে গতিশক্তি! কাজেই আমাদের ধারণা হতে পারে প্রকৃতিতে বুঝি অনেক ধরনের শক্তি আছে, কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, সব শক্তিই কিন্তু এক এবং আমরা শুধু এক ধরনের শক্তিকে অন্য ধরনের শক্তিতে রূপান্তর করি! তাহলে শক্তিটা কী?

সূর্যের মহাকর্ষ বলের আকর্ষণে পৃথিবী যখন তাকে ঘিরে বৃত্তাকারে ঘোরে তখন পৃথিবী বলের সমকোণে সরে যায় বলে কোনো কাজ করা হয় না!

শক্তি হচ্ছে কাজ করার ক্ষমতা! শুধু তা-ই না, যখন কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করে কাজ করা হয়, তখন সেই বলটি আসলে বস্তুটির মধ্যে একটা শক্তি দিয়ে দেয়। তাই বস্তুটির মধ্যে যতটুকু কাজ করা হয়েছে, বস্তুটির মধ্যে ঠিক ততটুকু শক্তি সৃষ্টি হয় এবং যে বল প্রয়োগ করছে তার ঠিক সেই পরিমাণ শক্তি খরচ হয়ে যায়। সেজন্য শক্তির এককও কাজের এককের সমান, জুল। কাজেই একটা বস্তুকে বল প্রয়োগ করে খানিকটা দূরত্বে ঠেলে নেওয়ার পর তার ভেতর কখনো গতির কারণে গতিশক্তি তৈরি হয়, কখনো ঘর্ষণের কারণে তাপশক্তি সৃষ্টি হয়, কখনো অবস্থানের কারণে স্থিতি শক্তির সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ যেটুকু কাজ করা হয়েছে সেটি কখনো নষ্ট হয় না, কোনো না কোনোভাবে এক ধরনের শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবী যখন তাকে ঘিরে বৃত্তাকারে ঘোরে তখন যেহেতু কোনো কাজ করা হয় না, তাই সেখানে সূর্যের কোনো শক্তি খরচ হয় না, পৃথিবীরও কোনোও শক্তি বৃদ্ধি হয় না।

common.content_added_by

ক্ষমতা

171
171

বিজ্ঞানের ভাষায় ক্ষমতা হচ্ছে কাজ করার হার। অর্থাৎ t সময়ে W কাজ করা হয়ে থাকলে ক্ষমতা P হচ্ছে :
P=Wt
আমরা আগেই দেখেছি, কাজ করার অর্থ হচ্ছে শক্তির রূপান্তর। শক্তির যেহেতু ধ্বংস নেই, তাই কাজ করার মধ্যে দিয়ে শক্তির রূপান্তর করা হয় মাত্র। তাই ইচ্ছে করলে আমরা বলতে পারি, ক্ষমতা হচ্ছে শক্তির রূপান্তরের হার। শক্তিকে তার একটি রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত করার বেলায় সব সময়ই খানিকটা শক্তির অপচয় হয়। কাজেই সব সময়ই আমরা যে পরিমাণ কাজ করতে চাই, তার সমপরিমাণ শক্তি দিলে হয় না, একটু বেশি শক্তি দিতে হয়।

শক্তির এককটি আমাদের খুব পরিচিত না হলেও ক্ষমতার এককটি আমাদের বেশ পরিচিত। যদি প্রতি সেকেন্ডে 1 জুল কাজ করা হয়, তাহলে আমরা বলি 1 ওয়াট (W ) কাজ করা হয়েছে বা শক্তির রূপান্তর হয়েছে। আমরা যদি 100 W এর একটা বাতি জ্বালাই তার অর্থ এই বাতিতে প্রতি সেকেন্ডে 100 জুল শক্তি ব্যয় হচ্ছে। নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র 1000 MW বিদ্যুৎ তৈরি হবে, সেই কথাটির অর্থ এই নিউক্লিয়ার শক্তিকেন্দ্রে প্রতি সেকেন্ডে 1000 × 10' জুল বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন হবে।

common.content_added_by

শক্তির বিভিন্ন রুপ

285
285

আমাদের জীবনে আমরা প্রতি মুহুর্তে নানা ধরনের শক্তি ব্যবহার করি। যেমন পানি গরম করার জন্য তাপশক্তির প্রয়োজন হয়, দেখার জন্য আমাদের আলোশক্তি লাগে, আমরা শুনি শব্দ শক্তি দিয়ে। বৈদ্যুতিক শক্তি দিয়ে আমরা যন্ত্রপাতি চালাই আবার রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে ব্যাটারি সেলে বিদ্যুৎ তৈরি করি। ভারী নিউক্লিয়াস ভেঙে আমরা যে নিউক্লিয়ার শক্তি পাই, সেটা দিয়েও বিদ্যুৎ শক্তি তৈরি করি। খাবার থেকে পুষ্টি নিয়ে আমাদের শরীরে শক্তি তৈরি হয়, আমরা কাজকর্ম করি! 

শক্তির সবচেয়ে সাধারণ রূপ হচ্ছে যান্ত্রিক শক্তি, বস্তুর অবস্থান, আকার এবং গতির কারণে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকেই যান্ত্রিক শক্তি বলে। যান্ত্রিক শক্তির দুটি রূপ হতে পারে গতিশক্তি এবং স্থিতিশক্তি।

গতিশক্তি: আমরা আগে বলেছি, কাজ করার ক্ষমতা হচ্ছে শক্তি। আমরা সবাই লক্ষ করেছি কোনো বস্তু গতিশীল হলে সেটা অন্য বস্তুকে ধাক্কা দিয়ে সেটাকেও খানিকটা দূরত্ব ঠেলে নিয়ে যেতে পারে। অন্য বস্তুকে ঠেলে খানিকটা দূরত্ব নিয়ে যাওয়ার অর্থ নিশ্চয়ই সেখানে কাজ হয়েছে! কাজেই আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি গতির জন্য বস্তুর ভেতরে একধরনের শক্তি হয় এবং সেটাকে বলে গতিশক্তি। একটা বস্তুর ভর যদি হয় m এবং তার গতিবেগ যদি v হয় তাহলে তার গতি শক্তি হচ্ছে

12mv2
কাজেই তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, গতিবেগ যদি দ্বিগুণ হয়ে যায় তার গতিশক্তিও তখন কিন্তু দ্বিগুণ হয় না, তার গতিশক্তি হয় চার গুণ বেশি। সেজন্য আমরা রাস্তাঘাটে যে ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটতে দেখি সেখানে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তার প্রধান কারণ প্রয়োজনের বেশি গতিশক্তি। একটা বাস-ট্রাক বা গাড়ি যখন প্রচণ্ড বেগে ছুটতে থাকে তখন তার অনেক বড় গতিশক্তি থাকে। দুঘর্টনার সময় এই পুরো শক্তিটার কারণে গাড়ি ভেঙেচুরে যায়, প্রচণ্ড ধাক্কায় মানুষ মারা যায়।

স্থিতিশক্তি: বল প্রয়োগ করে কোনো কিছুকে ঠেলে আমরা যদি খানিকটা দূরত্ব নিয়ে যাই, অর্থাৎ তার উপর কাজ করা হয়, তাহলে তার ভেতরে খানিকটা শক্তি দিয়ে দেওয়া হয়। যদি তখন বস্তুটির গতিবেগ বেড়ে যায়, আমরা বলতে পারি, কাজটি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে, যদি ঘর্ষণের কারণে উত্তপ্ত হয়ে যায় আমরা বলি কাজটুকু তাপ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি বল প্রয়োগ করে কোনো বস্তুকে উপরে তুলে কোথাও রেখে দেই, তাহলে সেটি কিন্তু গতিশীল হয় না, উত্তপ্তও হয় না। যেহেতু এটার উপর কাজ করা হয়েছে, তাই এটি নিশ্চয়ই খানিকটা শক্তি পেয়েছে, তাহলে শক্তিটুকু কোথায় গিয়েছে? একটু চিন্তা করলেই তুমি বুঝতে পারবে শক্তিটুকু হারিয়ে যায়নি। এটি স্থিতিশক্তি হিসেবে বস্তুটির ভেতরেই আছে। তুমি বস্তুটিকে উপর থেকে নিচে ফেলে দিলেই দেখবে, সেটি যতই নিচে পড়তে থাকবে, ততই গতিশীল হতে থাকবে, অর্থাৎ স্থিতি শক্তিটুকু গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হতে শুরু করবে।

অর্থাৎ পাথরটা যখন উপরে ছিল, তখন এই “উপরে” অবস্থানের জন্য তার মধ্যে এক ধরনের বিভব বা স্থিতিশক্তি জমা হয়েছিল।

ছুটে যাওয়া ক্রিকেট বলে অনেক গতিশক্তি সঞ্চিত থাকতে পারে।
common.content_added_and_updated_by

শক্তির নিত্যতা

271
271

আমরা আমাদের চারপাশে যে শক্তি দেখি, সেটি অবিনশ্বর। এর কোনো ক্ষয় নেই, এটি শুধু একটি রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন হয়। একটা পাথর উপরে তুললে তার মধ্যে স্থিতিশক্তি বা বিভব শক্তির জন্ম হয়। পাথরটা ছেড়ে দিলে বিভব বা স্থিতিশক্তি কমতে থাকে এবং গতিশক্তি বাড়তে থাকে। মাটি স্পর্শ করার পূর্বমুহূর্তে পুরো শক্তিটাই গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু মাটিকে স্পর্শ করার পর পাথরটি যখন থেমে যায়, তখন তার ভেতরে গতিশক্তিও থাকে না বিভবশক্তিও থাকে না, তাহলে শক্তিটা কোথায় যায়? তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, পাথরটা যখন মেঝেতে আঘাত করে তখন সেটি শব্দ করে যেখানে আঘাত করেছে সেখানে তাপের সৃষ্টি করে অর্থাৎ গতিশক্তিটুকু শব্দ কিংবা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়।

একটি ছোট পাথরকে সুতা দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে যদি আমরা এক পাশে একটু টেনে নিই, তাহলে সেটি তার স্থির অবস্থা থেকে একটু উপরে উঠে যায় বলে তার ভেতর এক ধরনের স্থিতিশক্তির জন্ম হয়। এখন পাথরটা ছেড়ে দিলে তার মধ্যে গতির সঞ্চার হয়। ঠিক মাঝখানে যখন পৌঁছায়, তখন স্থিতিশক্তির পুরোটাই গতিশক্তিতে রূপান্ত্রিত হয় এবং সে থেমে না গিয়ে অন্যদিকে যেতে থাকে এবং বেগ নিঃশেষ না হওয়া উপরে উঠতে থাকে, অর্থাৎ তার ভেতরে আবার স্থিতিশক্তির জন্ম হয়। সবচেয়ে উঁচুতে পৌঁছে গিয়ে এটি থেমে যায়, তখন আবার তার ভেতরে উল্টো দিকে গতির সঞ্চার হতে থাকে। এভাবে পাথরটি দুলতে থাকে এবং তার শক্তি স্থিতিশক্তি থেকে গতিশক্তি এবং গতিশক্তি থেকে স্থিতিশক্তির মধ্যে রূপান্তর হতেই থাকে। ঘর্ষণ এবং অন্যান্য কারণে শক্তি ক্ষয় না হলে এই প্রক্রিয়াটি অনন্তকাল ধরে চলতে থাকত!

সুতায় বেধে ঝুলন্ত পাথর দুলিয়ে দিলে স্থিতিশক্তি এবং গতিশক্তির মধ্যে বিনিময় হতে থাকে।

কাজেই শক্তির রূপান্তর খুবই স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। শুধু বিভবশক্তি এবং গতিশক্তির মধ্যে যে রূপান্তর হতে পারে তা নয়। আমাদের পরিচিত সব শক্তিই এক রূপ থেকে অন্য রূপে যেতে পারে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চারপাশে যে শক্তি দেখি, সেটি সৃষ্টিও হয় না ধ্বংসও হয় না, শুধু তার রূপ পরিবর্তন করে। এটাই হচ্ছে শক্তির নিত্যতার সূত্র।

common.content_added_and_updated_by

শক্তির রুপান্তর

274
274

আমরা আমাদের চারপাশে শক্তির রূপান্তরের অনেক উদাহরণ দেখি, যেমন:

বিদ্যুৎশক্তি: শক্তির রূপান্তরের উদাহরণ দিতে হলে আমরা সবার আগে বিদ্যুৎশক্তির উদাহরণ দিই, তার কারণ এই শক্তিকে সবচেয়ে সহজে অন্যান্য শক্তিতে রূপান্তর করা যায়। আমরা বৈদ্যুতিক পাখাতে বিদ্যুৎশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে দেখি। বৈদ্যুতিক ইস্ত্রি বা হিটারে এটা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। বাল্ব, টিউবলাইট বা এলইডিতে তড়িৎশক্তি আলোতে রূপান্তরিত হয়। স্পিকারে বিদ্যুৎ শক্তি শব্দশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আমরা সবাই আমাদের মোবাইল ফোনের ব্যাটারিকে বিদ্যুৎ দিয়ে চার্জ করি, যেখানে আসলে বিদ্যুৎশক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

বৈদ্যুতিক পাখাতে বিদ্যুৎশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
ব্যাটারিতে রাসায়নিক শক্তি বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়

রাসায়নিক শক্তি: শক্তি রূপান্তরের উদাহরণ হিসেবে রাসায়নিক শক্তিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আমাদের বাসায় রান্না করার জন্য যে গ্যাস ব্যবহার করি, সেটা রাসায়নিক শক্তির তাপশক্তিতে রূপান্তরের উদাহরণ। মোমবাতিতে আমরা রাসায়নিক শক্তিকে আলোতে রূপান্তর করি। গ্যাস, পেট্রল, ডিজেল বা এ ধরনের জ্বালানি ব্যবহার করে আমরা নানারকম ইঞ্জিনে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে দেখি। তবে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে রাসায়নিক শক্তির রূপান্তরের সবচেয়ে বড় উদাহরণটি হচ্ছে ব্যাটারি, যেখানে এই শক্তি বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

 

তাপশক্তি: পরিমাণের দিক থেকে বিবেচনা করলে নিঃসন্দেহে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি শক্তির রূপান্তর হয় তাপশক্তি থেকে। যাবতীয় যন্ত্রের যাবতীয় ইঞ্জিনে তাপশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করা হয়। থার্মোকাপলে (Thermocouple) দুটি ভিন্ন ধাতব পদার্থের সংযোগস্থলে তাপ প্রদান করে সরাসরি তাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। আমরা আগুনের শিখায় রাসায়নিক কিংবা বাল্বের ফিলামেন্টে তাপকে আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হতে দেখি ৷

যান্ত্রিক শক্তি: জেনারেটরে যখন বিদ্যুৎ তৈরি হয়, তখন আসলে যান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করে তারের কুণ্ডলীকে চৌম্বক ক্ষেত্রে ঘুরিয়ে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তর করা হয়। ঘর্ষণের কারণে সব সময়ই তাপশক্তি তৈরি হচ্ছে, সেখানে আসলে যান্ত্রিক শক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।

আলোক শক্তি: আজকাল সোলার সেল ব্যবহার করে সরাসরি আলো থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। এখন যদিও ফটোগ্রাফিক কাগজ ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে কিন্তু আমরা সবাই জানি আলোক সংবেদী ফটোগ্রাফির ফিল্মে আলোর উপস্থিতি রাসায়নিক শক্তির জন্ম দেয়।

সোলার প্যানেলে সরাসরি আলো থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয় 

শক্তির এই ধরনের রূপান্তর আমাদের চারপাশে ঘটতে থাকলেও আমাদের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা দরকার। শক্তি থাকলেই কিন্তু সব সময় সেই শক্তি ব্যবহার করা যায় না। পৃথিবীর সমুদ্রে বিশাল পরিমাণ তাপশক্তি রয়েছে, সেই শক্তি আমরা ব্যবহার করতে পারি না। আবার যখনই শক্তিকে একটি রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন করা হয়, তখন খানিকটা হলেও শক্তির অপচয় হয়।

common.content_added_by

অনুশীলনী

162
162

১। নিচের ছবিতে তিনটি শক্তির মাঝে পারস্পরিক রূপান্তরের উদাহরণ দেখানো হয়েছে তুমি অন্যগুলো দেখাতে পারবে?

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion